রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় একটি বাসা থেকে দম্পতির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে স্বামী আজমত আলীর (৪৫) লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় এবং স্ত্রী ফারজানা বেগমের (৩৬) লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে মেঝেতে। গতকাল শুক্রবার সকালে পুলিশ তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। আজমত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং ফারজানা একটি বেসরকারি এনজিওর অফিস সহকারী ছিলেন।

পুলিশ জানায়, অনেক দিন ধরেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ চলে আসছিল। একপর্যায়ে তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে স্ত্রী ফারজানা বেগমের কাছে যান আজমত আলী। ভোরে ডাকাডাকি করেও তাদের সাড়া না পেয়ে সন্তানদের সন্দেহ হয়। তারা বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ গিয়ে ওই বাসার দরজার তালা ভেঙে দুজনের লাশ উদ্ধার করে।

তেজগাঁও থানার ওসি সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, ফারজানার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দাম্পত্য কলহের জেরে স্ত্রীকে হত্যার পর আজমত আত্মহত্যা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ পাঠানো হয়েছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হয়েছে।

পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পশ্চিম নাখালপাড়ার ৮৫ নম্বর বাড়িটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার কার্যালয়। ফারজানা এ সংস্থার অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। রাতে সেখানেই থাকতেন। তার স্বামী আজমত ফেরি করে মাছ বিক্রি করতেন। নানা কারণে স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ ছিল তার। এ নিয়ে প্রায়ই দুজনের বাগ্বিত-া হতো। পরে আজমত তার দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে পশ্চিম নাখালপাড়ার ১৬৩ নম্বর বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তবে মাঝেমধ্যে তাদের সমঝোতা হতো এবং তারা কিছুদিন একসঙ্গে থাকতেন। সর্বশেষ কলহের পর তারা আলাদা ছিলেন। বৃহস্পতিবার আজমত সন্তানদের নিয়ে স্ত্রীর কাছে যান। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে তারা সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন। একপর্যায়ে তাদের রেখে সন্তানরা বাসায় চলে যান। সকালে এসে তারা এ পরিস্থিতি দেখতে পান। পুলিশের ধারণা, সমঝোতার আলোচনা থেকে নতুন করে কলহের সূত্রপাত হয় এবং তা খারাপ পরিণতির দিকে গড়ায়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আজমতের অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক বা ™ি^তীয় বিয়ের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি রাগী স্বভাবের ছিলেন। অন্যদিকে ফারজানা তাকে এড়িয়ে চলতে চাইতেন। তিনি স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্সও চেয়েছিলেন। অন্য কারও সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও একটি সূত্র দাবি করেছে। তথ্য অনুযায়ী, তিনিও দুবার ঘর ছেড়ে কারও সঙ্গে চলে যান এবং পরে কোনো কারণে ফিরে আসেন।

এদিকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারু-অর-রশিদ জানান, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে পারিবারিক কলহের জের বলেই ধারণা করা হচ্ছে। একজনকে খুন করে অপরজন আত্মহত্যা করেন। তবে এর বাইরে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দম্পতির বড় ছেলে মো. রিফাত পেশায় মোটর মেকানিক। তিনি জানান, বাবা-মায়ের কলহ তিনি অনেকবার মেটানোর চেষ্টা করেছেন। নানাভাবে বুঝিয়েছেন। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে বলেছেন। তবে কিছুদিন পরপরই তাদের মধ্যে ঝামেলা হতো। এ কারণে ফারজানা আলাদা থাকতে চাইতেন। এতে আরও বেশি সন্দেহ করতেন আজমত। সর্বশেষ আলাদা হওয়ার আগেও অন্তত দুবার তিনি স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে অন্যত্র চলে যান।

পুলিশ জানায়, সকালে ওই দম্পতির এক সন্তান পুলিশকে ফোন করে ঘটনার বিষয়ে কিছু তথ্য দেয়। তবে তখনো সে বাবা-মায়ের পরিণতির ব্যাপারে অবহিত ছিল না। সে শুধু বলেছে, ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ, কোনো সাড়া মিলছে না। এর পর পুলিশ গিয়ে সকাল ৯টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বহুতল ভবনের নিচতলায় আশার কার্যালয়। সেখানেই থাকতেন ফারজানা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করছেন। তাদের কাজের সুবিধার্থে তখন সংবাদকর্মীদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। বাইরে ছিল কৌতূহলী মানুষের ভিড়। সেখানে উপস্থিত প্রতিবেশীরা জানান, আজমত কিছুটা অলস প্রকৃতির ছিলেন। তিনি ঠিকঠাক কোনো কাজ করতেন না। প্রায়ই তারা কলহে লিপ্ত হতেন। প্রতিবেশীদের অনেকেই তাদের উচ্চস্বরে বাগ্বিত-ার শব্দ শুনেছেন।