মুক্তিযুদ্ধকালীন ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত) বীর উত্তমের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ কালীমন্দির শ্মশানে মরদেহ পৌঁছলে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাদের সামরিক সচিবরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সেনাপ্রধান ও বিজিবির পক্ষ থেকেও। সেখানে গান স্যালুট ও বিউগলের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শনের পর সেনাপ্রধানের পক্ষ থেকে উত্তরসূরি হিসেবে সিআর দত্তের ছেলের হাতে জাতীয় পতাকা হস্তান্তরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের জন্য লড়াই করেছেন সিআর দত্ত, সেই স্বপ্ন নিয়েই আগামী প্রজন্ম কাজ করবে বলে প্রত্যাশা পরিবারের সদস্যদের।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিআর দত্তের মরদেহ এর আগে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে রাখা হয়েছিল। সেখানে ফুল দিয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কৃতী সন্তানকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানায় পুলিশের একটি চৌকস দল। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি কেএম শফিউল্লাহ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সেখানে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, সিআর দত্ত মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠকও ছিলেন। দেশের যে কোনো ক্রান্তিকালে তিনি সঠিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে জাতির সেবা করে গেছেন। তার সাহসী ভূমিকা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন, তা পূরণ করার ক্ষেত্রে সিআর দত্ত অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

বিএনপির পক্ষ থেকেও সিআর দত্তের মরদেহে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সকালে বনানীর ডিওএইচএসে সিআর দত্তের বাসায় যান। সেখানে কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্যালুট জানান তারা। প্রতিনিধিদলে ছিলেন শাহজাহান ওমর, গৌতম চক্রবর্তী, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সুশীল বড়ুয়া ও শায়রুল কবির খান।

শ্রদ্ধা নিবেদনের পর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্তের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন আবদুর রউফ সিলেটের কানাইঘাট পাকিস্তান বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে। পরে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি একটি শোকবার্তা সিআর দত্তের ছেলে চিরঞ্জিত দত্তের কাছে হস্তান্তর করেন।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ঢাকার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদ, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোট, লালবাগ পূজা থানা কমিটি, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। গত ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিআর দত্ত।