হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবনাবসান হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। পুরান ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বর্ষীয়ান এই আলেমের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১০৫ বছর।হেফাজত চট্টগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমেদুল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর বড় মাদ্রাসা হিসেবে হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার ফেসবুক পেইজ থেকেও শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে। প্রায় ৩৪ বছর ধরে তিনি মাদরাসার মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শতবর্ষী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে একদল শিক্ষার্থীর আন্দোলনের মুখে হাটহাজারী দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) পদ থেকে পদত্যাগ করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফি।হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরা সদস্যদের বৈঠকে আল্লামা শফি এ ঘোষণা দেন।

বৈঠকের পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন শতবর্ষী এই আলেম। তাকে মধ্যরাতে অ্যাম্বুলেন্সে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম ক জানান, মধ্যরাতে শফি হুজুরকে অ্যাম্বুলেন্সে হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হয়। পরে হাসপাতালের ৩য় তলার ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ৮ নম্বর বেডে তাকে ভর্তি করা হয়।

তিনি জানান, শফি হুজুর হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। তার চিকিৎসায় শুক্রবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিকেলে ঢাকার আসগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা।বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফি। গত কয়েক বছরে তিনি বেশ কয়েকবার দেশ ও বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল হজম এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়ায় চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মাঠ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম বলেন, উনি (শাহ আহমদ শফী) দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। বুকে পেসমেকার বসানো আছে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনসহ আরও বিভিন্ন জটিলতা আছে। এর মধ্যে গত (বৃহস্পতিবার) রাতে নাকি উনি মাথা ঘুরে পড়ে যান। এরপর থেকে উনার পালস পাওয়া যাচ্ছিল না। হাসপাতালে আনার পর উনাকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। সকাল থেকে উনার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পরিস্থিতি নাজুকই বলা যায়। উনি আশঙ্কামুক্ত নন। উনার পরিবারের সদস্যরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকায় নিয়ে যান।

হেফাজত নেতা আ ন ম আহমেদ উল্লাহ বলেন, ঢাকার গেন্ডারিয়ায় আজগর আলী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা হুজুরকে মৃত ঘোষণা করেছেন। এদিকে,হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা আহমেদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১৮ সেপ্টেম্বর) পৃথক শোক বার্তায় তারা সমবেদনা জানান। শোক বার্তায়, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

দেশের শীর্ষ কওমি আলেম আল্লামা আহমদ শফী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। এর আগেও কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। গত কয়েক মাসে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছিল তার।