গাজীপুরে করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এক পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতাসহ পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বুধবার বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুর হতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ঘন্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।

কারখানার জিএম (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সৈয়দ মাহমুদ ফয়সাল জানান, বিশ^ ব্যাপী করোনা পরিস্থিতিতে ক্রয়াদেশ না থাকায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাদে কলমেশ^র এলাকাস্থিত ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ব্যান্ডো ফ্যাশন কারখানাটি ঈদের ছুটির একদিন পর গত ১২ আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ কারখানায় প্রায় দু’হাজার শ্রমিক রয়েছে। কারখানা বন্ধের নোটিশের প্রেক্ষিতে ১২ আগস্ট শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে একইদিন কলকারখানা অধিদপ্তরের টঙ্গী কার্যালয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক প্রতিনিধিদের বৈঠক ও একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট অপর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে শ্রমিকদের পাওনা সার্ভিস বেনিফিট, নোটিশ পে ও অর্জিত ছুটির ভাতা পরিশোধের কথা উল্লেখ রয়েছে।

শ্রমিকরা জানায়, সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গত ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের পাওনা সার্ভিস বেনিফিট, আগস্ট মাসের ৯দিনের বেতন, নোটিশ পে, মাতৃত্ব কালীন ও অর্জিত ছুটির ভাতাসহ বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধের কথা ছিল। নির্ধারিত দিনে পাওনাদির জন্য দীর্ঘসময় বন্ধ কারখানার গেইটে অবস্থান করলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ না করে পরিশোধের নতুন তারিখ পুনঃরায় ৩০ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়।

শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন ও শাহ মো. হারুন অর রশীদসহ স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকাল হতে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদির আশায় কারখানার গেইটে অবস্থান জড়ো হতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আংশিক পাওনাদি পরিশোধের ঘোষণা দেয়। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এসময় তারা পুরো পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানার পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবরোধের কারণে ব্যাস্ত ওই মহাসড়কের উভয়দিকে কয়েক শ’ যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। সন্ধ্যায় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। আলোচনার একপর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নিলে প্রায় সাড়ে ৭ ঘন্টা পর ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।

কারখানার জিএম সৈয়দ মাহমুদ ফয়সাল আরো জানান, শ্রমিকরা মোট ৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণ টাকার ব্যবস্থা করতে না পারায় বুধবার শ্রমিকদের আংশিক পাওনা (১ কোটি ৯০ লাখ টাকা) পরিশোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। অবশিষ্ট টাকা আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে পরিশোধের আশ^াস দেওয়া হয়। কিন্তু শ্রমিকরা তা না মেনে বিক্ষোভ শুরু করে ও মহাসড়ক অবরোধ করে। তবে কর্মচারীদের পাওনাদি ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে।