নীলফামারীর ডিমলায় পৃথক স্থান থেকে এক কলেজ ছাত্রী ও দুই সন্তানের এক জননী সহ দুই নারীর রহস্যজনক লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ।তবে এ ঘটনা গুলোর রহস্য অনেকটা স্পষ্ট হবার পরও হত্যা অথবা হত্যা প্ররোচনা মামলা না হয়ে অপমৃত্যু মামলা হওয়ায় এলাকা জুড়ে আলোচনা-সমলোচনার ঝড় বইছে।সরেজমিনে জানা যায়,সোমবার (৫ অক্টোবর)বিকেলে উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের রুপাহারার ডাঙ্গা পাড়া গ্রামের নিজ বাড়ির শয়ন ঘরের তীরের সাথে ওড়না পেঁচানো রিমু আক্তার (১৭)নামের এক কলেজ ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় প্রতিবেশি এক শিশু।পরে শিশুটি ছাত্রীটির পিতাকে বিষয়টি জানালে পরিবারের লোকেরা ছাত্রীটিকে উদ্ধার করে ডিমলা সরকারি হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ছাত্রীটিকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখান থেকে ছাত্রীটির লাশ পুনরায় বাড়িতে নিয়ে এসে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে সন্ধ্যায় লাশ ময়না তদন্তে প্রেরনের জন্য থানায় নেয়।

এ সময় পুলিশ ছাত্রীটির ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও দুটি চিঠি উদ্ধার করেছেন বলে স্থানীয় সুত্র জানায়।
ছাত্রীটি একই এলাকার দিনমুজুর মজিবুল ইসলাম ওরফে বোগার মেয়ে ও ডিমলা সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।তবে এলাকাবাসীর অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ বলেন,ওই ছাত্রীটির সাথে ডিমলা হাসপাতাল মোড়ের হোটেল ব্যববায়ী কাঁচেরের কলেজ পড়ুয়া ছেলে চাঁদের সাথে দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমিক চাঁদ ছাত্রীটির সাথে প্রতারনা করায় সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে যার একাধিক তথ্য প্রমান মেয়েটির মোবাইলেই রয়েছে। আসলে মেয়েটি প্রেমের বলি।এটা সরাসরি হত্যা মামলা না হলেও হত্যা প্ররোচনা মামলা হওয়া উচিত ছিল বলে তাদের অভিমত।

অপরদিকে একইদিনের বিকেলে ডিমলা সরকারি হাসপাতালে দুই সন্তানের জননী মুক্তা চন্দ্র রায়(২৮) নামের এক গৃহবধুর লাশ রেখে পালিয়ে যায় তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা। ওই গৃহবধু উপজেলার ডিমলা সদর ইউনিয়নের ভাটিয়াপাড়ার প্রভাতি গ্রামের মৃত, রমেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মাছ ব্যবসায়ী সুমন চন্দ্র রায় ওরফে ঘুঘুর স্ত্রী ও নীলফামারী সদরের কবরস্থান মোড় সংলগ্ন সওদাগর পাড়ার নরেশ চন্দ্র রায়ের মেয়ে। পুলিশ হাসপাতালে ওই গৃহবধূর লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে ময়না তদন্তে প্রেরনের জন্য রাতে লাশ থানায় নেয়।
ওই গৃহবধুর পিতার পরিবার অভিযোগ করে বলেন,প্রায় ১০ বছর আগে মুক্তার সাথে সুমনের পারিবাড়িক ভাবে বিবাহ হয়।বিয়ের কিছু বছর পর থেকেই কারনে-অকারনে তার স্বামী ও শশুর পরিবারের লোকেরা মুক্তাকে অমানবিক নির্যাতন করত। কিন্তু আমরা তার দুটি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিরবে তা মেনে নিয়ে মুক্তাকে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে বলে বুঝিয়ে আসতাম। ঘটনার দিন মুক্তাকে তার স্বামী ও তার স্বামীর পরিবারের লোকেরা অমানবিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।পরে দেবর সুধিরসহ কয়েকজন তাকে ডিমলা সরকারি হাসপাতালে আনলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করায় লাশ হাসপাতালে রেখে সে সহ অন্যরা পালিয়ে যায়। আমরা এলাকাবাসীর মারফৎ খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই।

আমরা এ ঘটনায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।এদিকে মৃত কলেজ ছাত্রীর ঘটনাস্থল ও গৃহবধুর লাশের ঘটনাস্থল (হাসপাতাল) পরিদর্শন করেছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ডোমার-ডিমলা সার্কেল)জয়ব্রত পাল,ডিমলা থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ডিমলা থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন,পৃথক দুটি লাশ উদ্ধারের ঘটনায় দুটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে ।মামলা নম্বর কত তা জানতে চাইলে তিনি বলেন,তা দেয়া যাবেনা ও রিপোর্টে তা লাগেনা! মামলা নম্বর উল্লেখ করা হলে রিপোর্ট আরো তথ্য বহুল হবে বলায় ওসি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এত পেঁচান কেনো ধুর।ওসি এ সময় বিরক্তবোধ হয়ে অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই অশোভনীয় ভাবে আবারও ধুর বলে সাংবাদিকের মোবাইল সংযোগটি কেটে দেন। ডিমলা থানার ওসির বিরুদ্ধে ওই থানায় যোগদানের পর থেকেই স্বেচ্ছাচারিতা ও সাংবাদিকদের সাথে অশোভনীয় আচরণ বিদ্যমান।

সুজন মহিনুল,বিশেষ প্রতিনিধি