কৃষক বাবার অভাবের সংসারে সদস্য ১২ জন। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। পরিবারে চার বোন এবং ছয় ভাইয়ের মধ্যে আলী আজগর হোসেন সবার ছোট। প্রতিদিন চলে জীবনযুদ্ধ, মান-অভিমান। একদিন নিজের স্ত্রী আর ছয় মাসের সন্তানকে নিয়ে ঘর ছাড়েন আজগর। সেটা ২২ বছর আগের ঘটনা।

শূন্য হাতে অনিশ্চিত জীবনের পথে পা বাড়ানো সেই আলী আজগর এখন নওগাঁ শহরের একজন সফল হোটেল ব্যসায়ী। আদালত গেটের বিপরীতে আজগরের ‘হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’ সরগরম সকাল থেকে সন্ধ্যা।

শুধু সফল ব্যবসায়ী নন, আলী আজগর অনন্য আরেকটি ক্ষেত্রেও। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে তার হোটেল বিনামূল্যে খেতে পারেন ৩০০ থেকে ৪০০ হতদরিদ্র, যাদের বেশিরভাগের দিন কাটে ভিক্ষা করে।

তাদের জন্য খাবারের মেন্যু- মাছ, মাংস অথবা ডিম, ভর্তা,সবজি ও ডাল। হোটেলের সামনে চেয়ার-টেবিল বিছিয়ে তাদের খাবারের ব্যবস্থা। এভাবে প্রায় ১০ বছর ধরে গরীদের সপ্তাহে একদিন একবেলা খাবার দিচ্ছেন আলী আজগর হোসেন।

৪৭ বছর বয়সী আজগরের গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার মহেষচন্দ্রপুর গ্রামে। এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে নওগাঁয় চলে আসার স্মৃতি এখনও তাকে আবেগতাড়িত করে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নওগাঁয় তখন একেবারে নতুন ২৫ বছরের আজগর। শহরের বালুডাঙা বাসস্ট্যান্ড এলাকার মল্লিকা হোটেলে ২৫ টাকা বেতনে হোটেল বয়ের কাজ শুরু করেন।

বছর কয়েক পর হঠাৎ একদিন হোটেল মালিক আলীম উদ্দিন ব্যবসা বন্ধ করে গ্রামে চলে যান। তবে এ সময় হোটেলটি চালু রাখার অনুমতি পান আজগর। আজগর বলেন, ‘শুরুতে কেবল গরুর মাংস, ভাত বিক্রি করছিলাম। বহু কষ্ট করে ব্যবসা দাঁড় করাতে হয়েছে। এভাবেই এখন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত খাবার হোটেল মালিক।‘

আজগরের হোটেলে ৩৫ জন কর্মচারী সকাল-বিকেল দুই শিফটে কাজ করছেন। শহরে থাকার মতো একটি বাড়ি হয়েছে। কলেজে লেখাপড়া করছে এক মেয়ে ও এক ছেলে।

হোটেলে নিয়মিত খেতে আসেন হতদরিদ্র জাহেরা বেওয়া। আজগরের জন্য দোয়া করে তিনি বলেন, ‘আমি খুব গরীব মানুষ বাপো, পরিবার থাকা হামাক (আমাকে) কেউ দ্যাখে না। ভিক্ষা করা খাই আর বৃহস্পতিবার আসা আজগর বাপোর হোটেলত পেট ভরা খাই, কোনো ট্যাকা লেওনা (নেয় না)।‘

একই ধরনের কথা জানালেন বৃদ্ধ সেফালি বেগম ও তাহের আলী। ৩-৪ বছর ধরে নিয়মিত এ হোটেলে খেতে আসেন তারা। মাংস-ভাত অথবা মাছ-ভাত দিয়ে পেটপুরে খেতে প্রতি বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের সবার গন্তব্য শহরের ‘হাজী নজিপুর হোটেল অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’।