পাবনার বেড়ায় উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে লাঞ্চিত করেছে পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এবং সভায় উপস্থিত একাধিক জনপ্রতিনিধি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ জানান, বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন উপজেলার কাজিরহাট ও নগরবাড়ি ঘাট ইজারা সংক্রান্ত একটি লিখিত রেজুলেশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকীকে অনুমোদনের জন্যে চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ায় ইউএনও তা অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানালে মেয়র বাতেন তার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে জেনেছি। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের উর্দ্ধতন মহলে অবহিত করেছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

এদিকে, উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উপস্থিত একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাজিরহাট ও নগরবাড়ি ঘাট সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার একটি লিখিত সিদ্ধান্তের রেজুলেশন অনুমোদন দিতে বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চাপ প্রয়োগ করেন।

বিষয়টি মেয়রের এখতিয়ার বহির্ভূত এবং বিধিসম্মত নয় বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তা অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন চরম উত্তেজিত হয়ে অকথ্য ভাষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে মারতে উদ্যত হলে সভায় উপস্থিত অন্যান্যরা তাকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরে সভাটি পন্ড হয়ে যায় এবং ওই সভায় উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে পরেন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন ও সকল কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী জানান, একটি অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার বিস্তারিত আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এর চাইতে বেশী কিছু আর বলতে পারছি না বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের মুঠোফোনে (০১৭১৯৪৬০৬৯৭) একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সভায় উপস্থিত ছিলেন, বেড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন, পুরান ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল্লাহ, জাতসাকিনী ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু, রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান উজ্জল হোসেন, আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেমসহ উপজেলা সকল সরকারী দপ্তর প্রধান।

প্রসঙ্গত, বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এক ইউপি চেয়ারম্যানের চাল চুরির ঘটনায় তার পক্ষে তদবির করায় দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা আওয়ামীলীগ তাকে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ করে জানান, মেয়র আব্দুল বাতেন সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী শামসুল টুকু এমপি’র ছোট ভাই হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তার দাপটে বেড়াবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।