তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের বেড়ে ওঠা ও প্রাপ্ত শিক্ষার ওপর সংশিষ্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ভর করে। তাই তরুণ প্রজন্ম এবং তার ভবিষ্যৎ ও নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বর্তমান প্রজন্মকেই ভাবতে হবে। বুঝতে হবে, চলমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণ প্রজন্ম নিজে নিজে বেড়ে উঠবে বিষয়টা এমন নয়।

সুষ্ঠু ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার বিকল্প নেই,

বাংলাদেশের শিক্ষা এখন জিপিএ পাঁচ এর উপর নির্ভরশীল, জিপিএ পাঁচ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার বেড়াজালে আটকা পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শৈশব কৈশোর যে মলিন, প্রাণহীন হয়ে পড়ছে তা আমাদের বোধগম্য হওয়া জরুরি।

আজকাল আমরা শুধুমাত্র সন্তানের জিপিএ পাঁচ অর্জনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন কিন্তু এই জিপিএ পাঁচ পাওয়ার চেয়েও সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যে আরো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষায় শিক্ষিত সন্তান ভবিষ্যতে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। জিপিএ পাঁচ নির্ভর একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতে তার বিদ্যার সাথে বাস্তবজীবনের সংযোগ ঘটাতে পারেন না,
সমাজবিচ্ছিন্ন এক মানবসত্ত্বায় পরিণত হয় কিন্তু একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তি তার জীবনে চলার পথে যাবতীয় করণীয়গুলো সম্পর্কে সদা সচেতন থাকে।

বিগত কয়েক দশক ধরে সেই যত্ন ও পরিচর্যার অভাবেই সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক অবক্ষয, নতুন প্রজন্ম ধাবিত হচ্ছে অধঃপতনের দিকে। তাই আমরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হই, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না গ্রহণ করি তাহলে তরুণ প্রজন্মের ধ্বংস অনিবার্য। যা সমগ্র জাতির জন্য এক মহা সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ক্ষয়প্রাপ্তি। সামাজিক মূল্যবোধ তথা সততা, উদারতা, সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা, কল্যাণবোধ, নান্দনিক সৃজনশীলতা ইত্যাদি নৈতিক গুণাবলী লোপ পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়াকে বলে সামাজিক অবক্ষয়। আর এই অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব, অসহিষ্ণুতা ও সর্বগ্রাসী অশ্লীলতার মতো আরো কিছু বিষয়।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে একে অপরের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব প্রকট। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা লক্ষ করা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছোট ছোট অনু পরিবারগুলোতে ঈর্ষা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব এসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধের জায়গাটি দখল করে নিয়েছে, পারিবারিক আবহকে করে তুলেছে বিষাক্ত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সন্তানেরা। অসুস্থ পারিবারিক আবহে সন্তানও অস্বাভাবিক মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। সেই সাথে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, পেশীশক্তির প্রভাব, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সর্বোপরি লাগামহীন অশ্লীলতাই আজকের তরুণ সমাজকে চরম অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করা। সেই সাথে প্রয়োজন পরমত সহিষ্ণুতার চর্চা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করা। এছাড়া সকল প্রকার অশ্লীলতা শুধু বর্জনই নয় ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রতিরোধও করতে হবে। যার শুরুটা হতে হবে নিজ পরিবার ও সমাজ থেকে।

সামাজিক সমস্যা দূর করতে রাষ্ট্রের সহযোগীতার হয়তো প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু মূল দায়িত্ব সমাজ তথা পরিবারকেই নিতে হবে। সন্তানকে আরো বেশি সময় দিতে হবে, তাদের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করতে হবে, সর্বোপরি তার নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

মোহাম্মদ মাহামুদুল হাসান কালাম মালদ্বীপ প্রবাসী