আমরা একটা কথা প্রায়শই বলি “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।”সেটা কিভাবে,তাঁর ব্যাখা আমাদের অজানা নয়। আবার কথায় কথায় আমরা বলি শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব!! পাঁচ বছর বয়স থেকে কলকারখানায়,গ্যারেজে,ইটের ভাটায়, ওয়ার্কশপে কাজ করে, গাড়ির হেলপারি করে,ইট–পাথর ভাঙার কাজে যোগ দিয়ে?? নাকি পিতা–মাতা পরিবারের স্নেহ–মমতা থেকে বন্ঞ্চিত হয়ে, স্কুলে লেখাপড়া না শিখে নিরক্ষর থেকে,নানারকম রোগে আক্রান্ত হয়ে জীর্ণ–শীর্ণ হয়ে বেঁচে থেকে!! মোটেই না।এগুলোর মধ্যে দিয়ে কোনো শিশুই জাতির ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারবে না।এসব করে কোনো শিশুই তাঁর পিতার স্বপ্ন,দেশের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না। শিশুদের দিয়ে আমরা অল্প বেতনে,কখনও আবার শুধু দু’বেলা খাবারের বিনিময়ে যে সুবিধা নিই তা শুধু তাদের জন্য ক্ষতিকর নয়,আমাদের জন্যও আত্মঘাতী।

আমরা অনেকেই সভা-সমিতিতে,সেমিনারে শিশুশ্রম বন্ধের জন্য বড় বড় কথা বলি,কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার শিকি অংশও করি না। তার উদাহরণস্বরূপ,জাতীয় শিশুশ্রম ২০১৩–তে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এর এক সমীক্ষা লক্ষ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে এখন (সমীক্ষা ২০১৩) সাড়ে ৩৪ লাখ শিশু কর্মরত রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ১৭ লাখ শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে।বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য।কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে প্রায় ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।সুতরাং এটা সহজেই অনুমেয় যে বাংলাদেশে শিশুশ্রমের পরিসর ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।শিশুশ্রমের এই পরিসংখ্যান নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আগামী প্রজন্মের দ্বারা দেশের অগ্রগতি ও উন্নতি ব্যাহত হতে বাধ্য। তাই জাতির ভবিষ্যতকে এমন বিপর্যয় থেকে রক্ষা আমাদের অধিক গুরুত্বপূর্ণ।এজন্য প্রথমে আমাদের স্ববিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সরকার শিশুশ্রম বন্ধের জন্য যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো পালন করতে হবে এবং যারা তা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। শিশুকে পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে আমাদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির মূলে রয়েছে শিক্ষা। আমরা যদি শিশুদের যথাযথভাবে শিক্ষার আওতায় না আনতে পারি তাহলে জাতীয় উন্নতি সম্ভব হবে না। কারণ শিশুরা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে না পারলে তাঁরা দেশের জন্য অকল্যাণকর কাজের কর্মী হয়ে উঠবে। এটা দেশের জন্য কোনো ক্রমেই সুফল বয়ে আনবে না।তাছাড়া আমাদের দেশের শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুদের অবস্থা করুণ।তাদের খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা তাদের টোকাই,পিচ্চি বলে ডাকি।আমাদের এই আচরণ পরিহার করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন কলকারখানা,বাসাবাড়ি, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় এখনও বেআইনিভাবে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হয়।এমন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠানকে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুশ্রমে শিশুর পিতা–মাতা এবং সমাজের মানুষকে এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। শিশুশ্রম বন্ধের কঠোর আইন থাকলেও সে আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন না থাকার কারণে শত চেষ্টা করেও শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না।আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে এবং শিশুদের পর্যাপ্ত বিনোদন ও স্কুলমুখী করার জন্য আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।তবেই আমরা দেশ ও জাতিকে একটি সুশিক্ষিত আগামী প্রজন্ম উপহার দিতে পারবো।

শিক্ষার্থী,বরেন্দ্র কলেজ রাজশাহী।