গাজীপুরের কালীগঞ্জে পিকনিকে গিয়ে মদ খেয়ে নেচে গেয়ে মাতলামি ও গালিগালাজ করার জেরে খুন হয়েছে ব্যবসায়ী সাইফুল। শ্বাস রোধে হত্যার পর বন্ধুরা সাইফুলের লাশ বালু নদীতে ফেলে দেয়। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় জড়িত থাকায় নৌকার মাঝিকে শনিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রায় পাঁচ বছর পর চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য উম্মোচন করেছে পিবিআই।

গ্রেফতারকৃতের নাম নজরুল ইসলাম (৩০)। সে গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার মোঃ সাইজ উদ্দিনের ছেলে।

গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বাসাবাসি এলাকার রফিজ উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০) কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ী। ২০১৫সালের ১৪ আগস্ট বালু নদী থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় নজরুলকে শনিবার ভোর রাতে বাসাবাসি এলাকা হতে গ্রেফতার করে পিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত নজরুলকে আদালতে হাজির করা হলে সে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পর কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী সাইফুল খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত নজরুল স্বীকারোক্তিকালে লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণণা দিয়ে জানিয়েছে গত ২০১৫সালের ১৩ আগস্ট সকালে পিকনিকে যাওয়ার জন্য চার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে সাইফুল স্থানীয় বাসাবাসি ঘাট থেকে নজরুলের ইঞ্জিন চালিত নৌকা (ট্রলার) ভাড়া করে সারদী বাজারের দিকে রওনা হন। নৌকাটি ঘাট থেকে ছাড়ার পরপরই তারা রুটি ও মাংস খেয়ে মদ পান করতে শুরু করেন। তারা নৌকায় গান গেয়ে নাচানাচি করতে থাকেন। কয়েক ঘন্টা মদ খেয়ে নেচে গেয়ে মাতলামি শেষে দুপুরের দিকে তারা পুনঃরায় বাসাবাসি ঘাটের দিকে ফিরছিলেন। পিকনিকে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মদ পান করায় সাইফুল অন্যদের চেয়ে বেশী নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মদের নেশায় মাতলামি করার এক পর্যায়ে সাইফুলের সঙ্গে নৌকার অন্যদের কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। সাইফুল তাদেরকে বিশ্রী ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। এসময় সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে তার সঙ্গীরা। সাইফুলকে হত্যার বিষয়টি জানতে পেরে নৌকার মাঝি নজরুল ইসলামও এ পরিকল্পনায় অংশ নেয়। একপর্যায়ে সাইফুল নৌকার ছৈয়ের ভিতর চলে আসে। হঠাৎ সাইফুলের গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নজরুল। এসময় অন্যরা সাইফুলের হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে। পরে নিহত সাইফুলের লাশ বালু নদীতে ফেলে দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসে। তারা গ্রামের লোকজনকে জানায়, অধিক মদ খেয়ে মাতলামি করে নাচানাচি করার সময় সাইফুল নৌকা থেকে নদীতে পড়ে পানিতে পরে ডুবে গেছে।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান আরো জানান, পরদিন ১৪ আগস্ট বালু নদী থেকে সাইফুলের ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু ময়না তদন্ত রিপোর্টে শ্বাসরোধে তাকে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেলে এ ঘটনায় ২০১৭সালের ১১ ডিসেম্বর ওই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্ত শেষে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। কিন্তু আদালত চ’ড়ান্ত রিপোর্ট আমলে না নিয়ে স্বপ্রনোদিত হয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নজরুলকে শনিবার ভোর রাতে বাসাবাসি এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।