লালমনিরহাট সদর থানার সাবেক ওসি মাহফুজ আলমের হাত স্যানিটাইজ করে ঘুষ নিয়ে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি সংবাদ সম্মেল করেছেন ভুক্তভুগি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। শনিবার(২৪ অক্টোবর) দুপুরে লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ভুক্তভুগি নবিয়ার হোসেনের স্ত্রী মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে শাহানা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহানা বেগম বলেন, আমার প্রতিবেশি মৃত আজাহার আলী ড্রাইভারের স্ত্রী মরিয়ম, ছেলে মুন্না, মিনাল, ছেলের বউ সুখি বেগম ও মেয়ে সুমি বেগম একটি দাদন ব্যবসায়ী পরিবার। স্বাক্ষীত চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্প নিয়ে চরা সুদে টাকা লেনদেন করাই তাদের পেশা। পুরো পরিবারের দাদনের ফাঁদে সর্বশান্ত হয়েছেন শহরের অনেকেই। কেউ সুদের টাকা দিতে ব্যর্থ হলে চিহ্নিত এ দাদন ব্যবসায়ী পরিবারটি তাদের নিজেস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে নিরীহ মানুষকে নির্যাতন, বসতভিটা দখলসহ মিথ্যা মামলায় হয়রানী করেন। রেলওয়ে নিম্নপদের কর্মচারী হিসেবে আমার সামান্য আয়ে চলে আমার ৫ সদস্যের সংসার। পরিবারের প্রয়োজনে আমিও ওই পরিবারের কাছে ৬পাতা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে ২০১৪ সালে সুদের উপর ২লাখ টাকা গ্রহন করি। যা গত বছর সুদে আসলে পরিশোধ করলেও স্ট্যাম্পগুলো আজ কাল বলে আর ফেরত দেয়নি। চাইলে উল্টো তারা ৩লাখ টাকা দাবি করেন। অন্যথায় বাড়িটি ছেড়ে দিতে হুমকী দেন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, উক্ত স্ট্যাম্পগুলো ফেরত চাওয়া গত ২জুলাই দাদন চক্রটি লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে আমার উপর হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাংচুর করে। এ নিয়ে আমি ২২ জুলাই দাদন চক্রটির বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করি। উক্ত মামলাটির কাউন্টার দিতে তারাও তৎকালিন ওসি মাহফুজকে ঘুষ দিয়ে আমাদের ফাঁসাতে একটি মিথ্যা মামলা (নং৪৬০) দায়ের করেন।

ওসি মাহফুজের উক্ত মামলার ঘুষ লেনদেনের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গনমাধ্যমে ভাউরাল হলে ওসি মাহফুজকে তাৎক্ষণিক স্ট্যান্ড রিলিজ করে পুলিশ সদর দপ্তর। কিন্তু সেই ঘুষ গ্রহন করে আমার বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে তা আজও প্রত্যাহার করা হয়নি। এ মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার দাবি করছি।
সংবাদ সম্মেলনে শাহানা বেগম বলেন, আমাকে ফাঁসাতে দাদন চক্রটির টাকার বিনিময়ে ওসি মাহফুজ যেসব কুটবুদ্ধি (ভাইরাল হওয়া ভিডিও মতে) দিয়েছেন সেই অনুযায়ী আজও তারা আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা, হামলা ও ঝামেলা করে আসছে। সেই কুটবুদ্ধিতে দাদন চক্রটি আমার বন্ধ হওয়া ব্যাংক হিসাবের চেক দিয়ে মিথ্যা ১৪ লাখ টাকা দাবি করে উকিল নোটিশ ও স্ট্যাম্পগুলো দিয়ে আমার রেলওয়ের বাড়িটি দখলে পায়তারা করছে। তাদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে একাধিক জিডি করেছি, মামলা করেছি। কিন্তু তারা টাকার জোরে মিথ্যাকে সত্য বানানোর অপচেষ্টা করছে। আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টা করছে। আমি দাদন চক্রটির মিথ্যা হয়রানি থেকে বাঁচতে চাই। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে অভিযুক্ত দাদন ব্যবসায়ী মরিয়ম বেগম কয়েকজনকে নিয়ে অতর্কিত ভাবে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে হট্রগোল বাঁধান। এ সময় শাহানাকে দেখে নেয়ার হুমকী দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে আগত সাংবাদিকরা বিরক্ত হয়ে অনেক চেষ্টায় মরিয়মকে সংযত করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন, শাহানার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান আলী, মুক্তিযোদ্ধা রমজান আলী, নুরজামাল হোসেন প্রমুখ।