বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) সকালে মিন্নিকে কড়া নিরাপত্তায় বরগুনা জেলা কারাগার থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়।

বরগুনা জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক মো. আনোয়ার হোসেন এ তথ‌্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বরগুনা জেলা কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত নারী বন্দিদের রাখার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিন্নিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ পুরুষ বন্দি এখনও বরগুনা জেলা কারাগারে আছে।’

গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের মৃত‌্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় অপর চার আসামিকে। রায়ের পর থেকেই বরগুনা জেলা কারাগারের নারী কনডেম সেলে বন্দি ছিলেন মিন্নি।

রায়ে বিচারক বলেন, আসামি রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, মোহাম্মদ হাসান ও মিন্নি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম রিফাত শরীফকে হত্যার অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এই মামলার ঘটনা ঘটাইয়া তাকে খুন করিয়া পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছে বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হইয়াছে।

ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারক বলেন, কতিপয় ব্যক্তি মিলিয়া তাহাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কোনো অপরাধজনক কাজ করিলে যেভাবে দায় ঠিক হইত, ঠিক সেইভাবেই দায়ী হইবে। তদানুসারে এই মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করিবার দায়ে উক্ত আসামিগণ সমভাবে দায়ী।

গত বছরের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। এই হত্যাকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে জেলা শহরটিতে ‘কিশোর গ্যাং’য়ের দাপট, এলাকায় আধিপত্য, মাদক বাণিজ্য আর তাতে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতার কথা। প্রধান হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত হন সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি ছোট্ট জেলা শহরটিতে নিজেকে ‘নয়ন বন্ড’ নামে পরিচিত করিয়ে দল পাকিয়ে নানা অপকর্ম চালাচ্ছিলেন।

হামলার ভিডিও দেখার পর সবার সহানুভূতির কেন্দ্রে ছিলেন রিফাত শরীফের স্ত্রী বরগুনা কলেজের ছাত্রী মিন্নি। কিন্তু ক’দিন বাদেই বেরিয়ে আসে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক-আধিপত্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রেমের সম্পর্কও।

নয়নের মা দাবি করেন, তার ছেলে ও মিন্নি গোপনে বিয়ে করেছিলেন, পরে নয়নকে ছেড়ে তারই বন্ধু রিফাতকে বিয়ে করেন। সোশাল মিডিয়ায়ও নয়নের সঙ্গে মিন্নির জন্মদিন উদযাপনসহ নানা ছবি আসতে থাকলে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।

আবার হত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে রিফাত শরীফ মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নয়নকে দায়ী করেন তিনি। তা নিয়ে বিরোধে মিন্নি নয়নের পক্ষ নিয়ে বলে রিফাতের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে মামলার তদন্তকারীরা জানতে পারেন। তারা বলেন, মিন্নি আবার নয়নকে নালিশও দিয়েছিলেন।

তবে হত্যাকাণ্ডের দিনও এসব অজানা ছিল; সবাই নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ হামলাকারীদের কোপ থেকে স্বামী রিফাত শরীফকে রক্ষা করতে মিন্নির ছুটোছুটিই দেখছিল।