ফরিদপুর সংবাদদাতা: নৌকা বনাম ধানের শীষ। পুরনো লড়াই। এবার এ লড়াই ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। প্রধান দুই জোটের প্রার্থীরা লড়ছেন নৌকা আর ধানের শীষে। মধুখালী এখন ভোটের সাজে সাজতে শুরু করেছে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের কাছে মধুখালীবাসীর পরিচয় এখন ‘ভোটার’।
নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটা পরীক্ষা। নির্বাচনে কারচুপি, সংঘাত কিংবা নেতিবাচক কিছু হলে সরকারি দলকেই বেশি প্রশ্নের মুখে ফেলবে। জাতীয় নির্বাচনে একচেটিয়া জয়ের পর এই নির্বাচনে হারলে সেটা সরকারের জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করবে। ফলে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকেরা যেকোনো মূল্যে জয় চাইছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এগিয়ে—এটা দেখাতে প্রচারে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।

অন্যদিকে আগের অভিজ্ঞতায় এই নির্বাচন নিয়েও সংশয় আছে বিএনপির। মধুখালী পৌরসভার সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। এই যন্ত্রের ব্যাপারে বরাবরই সন্দিহান বিএনপি।

ভোটের উত্তাপ দিয়েই শেষ হচ্ছে পুরাতন বছরের। আসছে ১০ ডিসেম্বর মধুখালী পৌরসভার ভোট। মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট হচ্ছে। মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নৌকা-রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ধানের শীষ। কার্যত, লড়াই হবে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে।

আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে এর আগেই শুরু হয়েছে ঘরোয়া বৈঠক। নিজ নিজ দলের নেতা-কর্মীরা মতবিনিময়ও শুরু করেছেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতারাও এ ভোট পর্যবেক্ষণ করছেন।

স্থানীয় বিএনপির নীতনির্ধারকেরা মনে করছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মামলা-হামলায় কারনে নেতা-কর্মীরা মাঠে নামতে পারেননি। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও জোর পায়নি। এখন পৌর নির্বাচনের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামিয়ে চাঙা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি দল কারচুপি-জবরদস্তি করলে মধুখালী থেকেই সারা দেশে সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে সহায়ক হবে এই নির্বাচন।

আচরণবিধি অনুসারে, নির্বাচনে মন্ত্রী-সাংসদেরা প্রচারে নামতে পারবেন না। আওয়ামী লীগের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাই মন্ত্রী কিংবা সাংসদ। অন্যদিকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রচারে নামার ক্ষেত্রে আইনি বাধা নেই।

আওয়মীলীগ: মেয়র এবং দল সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বিজয়ী করার মিশন নিয়েই আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামছেন মধুখালী আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা। মধুখালী পৌরসভায় এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। মধুখালী পৌরসভা নিজেদের দখলে রাখতে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। জয়ের ধারা ধরে রাখতেই মেয়র পদপ্রার্থীর পরিবর্তন করেনি।প্রচারের পাশাপাশি চলছে ঘরোয়া প্রস্তুতি। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও হোমওয়ার্ক করে রাখছে। থানা-ওয়ার্ডে গঠন করা হবে কেন্দ্রভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

আওয়ামীলীগের প্রার্থী খন্দকার মোরশেদ মোরশেদ রহমান লিমন দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, সরকারের উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডের বিবরন। গত ৫ বছরে মেয়র হিসাবে তার সাফল্যের কথা বলছেন। নির্বাচিত হলে কি কি পরিকল্পনা আছে পৌরসভা নিয়ে তা জানান দিচ্ছেন লিমন।

বিএনপি: বিএনপি : দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিকূল পরিবেশেও পৌর নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের অংশ হিসেবেও নির্বাচনে যাওয়ার কথা বললেও কার্যত ভোটে অংশ নেওয়া ছাড়া সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। একইভাবে আগামীতেও স্থানীয় সরকারসহ সব নির্বাচনেই ভোটযুদ্ধে মাঠে থাকবে বিএনপি। নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে মাঠের নেতা-কর্মীদের রাজপথমুখী করাই মূল লক্ষ্য। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দুইভাবে চাঙ্গা হন। একটি হলো ভোটের মাধ্যমে। অন্যটি দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে। দুটি কাজই বিএনপি একসঙ্গে করে যাচ্ছে।

বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শাহাবুদ্দীন আহম্মেদ সতেজ একাই নীরব ভোট বিপ্লব ঘটাতে চান। দলীয় নেতা-কর্মীদের সরকার দলীয় সমর্থকদের হামলা থেকে রক্ষা করতে একাই প্রচারনা চালাচ্ছেন। গাড়াখোলায় যুবনেতা মাহবুবের উপর হামলা ও মারধরের ঘটনার পর থেকেই তিনি একা চলো নীতি অনুস্মরন করছেন।নেতা-কর্মীরা যার যার মতো ধানের শীষের পক্ষে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।