গাজীপুরের কাপাসিয়ায় সড়ক, আবাদী জমি, বাগান ও গাছপালাসহ শীতলক্ষ্যা তীরের বিশাল এলাকা প্রায় ১০/১২ ফুট গভীরে দেবে গেছে। এতে কাপাসিয়া-শ্রীপুর ব্যস্ততম সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ নিয়ে ওই একই এলাকায় চারবার ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ভোর রাতের এ ভ’মিধ্বসের পর দস্যু নারায়নপুর এলাকার রাস্তা সংলগ্ন দাসপাড়ার অন্ততঃ ২০টি পরিবারের লোকজন এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

স্কুল শিক্ষক রতন দাসসহ এলাকাবাসী জানান, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শীতলক্ষ্যা তীরবর্তী কাপাসিয়া উপজেলার দস্যুনারায়নপুর বাজারের পূর্ব পাশের দামপাড়াসহ আশেপাশের এলাকা বিকট শব্দে কেঁপে উঠে। এসময় প্রায় দুইশ’ফুট দীর্ঘ ওই এলাকার কাপাসিয়া-শ্রীপুর সড়কসহ পার্শ্ববর্তী প্রায় চার হাজার বর্গফুট আবাদী জমি ও গাছপালাসহ ভুমি কমপক্ষে ১০/১২ ফুট দেবে যায়। এতে আশেপাশের লোকজন আতংকিত হয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে পড়েন। তাদের চোখের সামনেই ভ’মিধ্বসের এ ঘটনা ঘটে। ভূমি ধ্বসের ঘটনায় আশপাশের সন্তোষ মাস্টার, ননী গোপাল, সাধন মাস্টার, শুশিল চন্দ্র, নিতাই চন্দ্রসহ কমপক্ষে ১২টি পরিবার বসতবাড়ি ভূমিধসের ঝুঁকিতে পড়েছে।

স্থানীয় গৃহবধূ লিপি দাস জানান, ভূমি ধসে তাদের ১৫ শতক জমি মৌসুমী সব্জীর ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তার মতো অনেকেরই দেবে যাওয়া অংশে পাকা সড়ক, কলা বাগান ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ ব্যবসায়ী তমিজউদ্দিন জানান, ১৯৬৮ সালে ওই এলাকায় সর্ব প্রথম ভ’মি দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় পরে দ্বিতীয় দফায় ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাস্তা ও একটি বাড়িসহ বিশাল এলাকা প্রায় ১৫ ফুট নিচে দেবে গিয়েছিল। তখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল স্থানটি পরিদর্শন করেন। তারা মাটির নমুনা পরীক্ষা করে জানান ওই এলাকায় নদী ও নদীর তীরবর্তী এলাকার মাটির গভীরে অতি মাত্রায় কাঁদামাটি ও পিট কয়লা জাতীয় পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে গেলে এগুলো শুকিয়ে যায়। ফলে সেখানে শূন্যতা সুষ্টি হয়ে ভ’মি দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

তৃতীয় দফায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একই এলাকা বেশ কিছু গাছপালা, কলাবাগান ও রাস্তাটিসহ প্রায় ১০ ফুট নিচে দেবে যায়। পরে সড়ক ও জনপদ বিভাগ রাস্তাটির উত্তরপাশে নিচ থেকে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে মজবুত করে নির্মাণ করে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় ছয় মাসের মাথায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই এলাকায় রাস্তার মাঝ বরাবর ফাটল দেখা দিয়ে প্রায় ৪ ইঞ্চি পরিমাণ দেবে যায়। পরে সেখানে পিচ ঢালাই দিয়ে মেরামত করা হয়। সড়ক ও জনপদ বিভাগ আশঙ্কাজনক এ সড়কের দুইপাশে ‘সয়েল সেটেলমেন্ট পর্যবেক্ষণ চলিতেছে’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন করে দেয়। ফলে এই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা ওই স্থানে গিয়ে সাবধানে চলাচল করত। কিন্তু চতুর্থ বারের মতো শুক্রবার ভোর রাতে আবারো সড়কসহ একই এলাকা প্রায় ১০/১২ ফুট নিচে দেবে যায়।

এ ব্যাপারে গাজীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন জানান, গত বছর ওই সড়কের সংষ্কারকাজ শেষ হয়েছে। সংষ্কারের পর ৬ মাস পর্যবেক্ষণও করা হয়েছে। এতে কোনো প্রকার ঝুুঁকির আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু কেন এমনটি হল তা বোঝা যাচ্ছে না।

এদিকে ভূমিধ্বসের খবর পেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আমানত হোসেন খানসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা ও নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।