বেঁচে থাকার জন্য মানুষ অনেক ধরনের পেশাই বেছে নিচ্ছেন। তেমনই একজন লাহা উদ্দিন। যিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাঁশি। আর এ বাঁশি বিক্রি করেই চলে তার সংসার। তবে বংশীবাদক লাহা উদ্দিনের বাঁশি বাজানোর পদ্ধতি একটু ভিন্ন। মুখের মতো নাক দিয়েও সুর তোলেন বাঁশিতে। এভাবেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি।

বংশীবাদক লাহা উদ্দিনের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর এলাকায়। ৩০ বছর ধরে তিনি এ পেশায় রয়েছেন। অভাবের কারণে তেমন লেখাপড়া করতে পারেননি। মাত্র অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই মারা যান বাবা। এরপর সংসারের হাল ধরতে বেছে নেন বাঁশি বিক্রির পেশা। দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজার ও বাণিজ্যিক এলাকা ঘুরে ৩০ বছর ধরে বাঁশি বিক্রি করছেন। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নাক ও মুখ দিয়ে নানা সুরে বাঁশি বাজান বংশীবাদক লাহা উদ্দিন। ক্রেতারা জড়ো হলে বিক্রি করেন বাহারি নামের বাঁশি। মোহন, আর, বিন, নাগিনী, খিলাসহ বিভিন্ন নামের বাঁশি রয়েছে লাহা উদ্দিনের কাছে। বাঁশি বিক্রির সময় একবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। এতে ছয় বছর ধরে মেরুদন্ডের হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন।
লাহা উদ্দিন জানান, ছোট বেলায় তার বাবার কাছ থেকে বাঁশি বাজানো শিখেন। এরপর সংসারের হাল ধরতে বাঁশিকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কখনো বাঁশি বাজিয়ে কখনো বিক্রি করে চলে তার সংসার।
তিনি বলেন, আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজানোর জন্য নেয়া হতো। এখন তেমন কেউ নেন না। তবে বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে বাঁশি বিক্রি করি।

লাহা উদ্দিন চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে বাঁশি সংগ্রহ করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় প্রতিটি বাঁশি বিক্রি করেন । আগে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি বাঁশি বিক্রি হলেও এখন নেমে এসেছে ১০-১৫টিতে। স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী রাশেদ কামাল বলেন, আমরা সাধারণত মুখ দিয়ে বাঁশি বাজাতে দেখি, কিন্তু লাহা উদ্দিন বাজান নাক দিয়ে। এমন প্রতিভার মানুষটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর অনুরোধ করছি। এবিষয়ে মাদারীপুর কালচারাল অফিসার সাইফুল হাসান মিলন বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লাহা উদ্দিনের আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া তাকে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে যন্ত্রশিল্পী হিসেবে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এতে লাহা উদ্দিন আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।