বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্তে অভিযান চালিয়ে এক বছরে ১ শ’ ২০ কোটি টাকার মাদক,অস্ত্র,ডলার ও সোনাসহ বিভিন্ন চোরাচালানী পন্য আটক করেছে বিজিবি সদস্যরা। এ সময়ে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ৩৭৮ জন পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। মাদক ও সোনা চোরাচালানে অল্প সময়ে বেশি অর্থ আয়ের আশায় চোরাচালান পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন সীমান্তের সাধারণ মানুষ। সেইসঙ্গে অনেকে নিজেরাই চোরাচালানকারী গডফাদার সেজে অন্যদের দলে টেনে নিচ্ছেন।

জানা গেছে, বেনাপোলের বিভিন্ন সীমান্তে পাচারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় পাচারকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে আবার প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ে চোরাচালান ব্যবসায়। বেনাপোল সীমান্তের কায়বা, রুদ্রপুর, গোগা, অগ্রভুলাট, পাঁচভুলাট, শালকোনা, পাকশিয়া, ডিহি, শিকারপুর,রামচন্দ্রপুর এবং পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, রঘুনাথপুর, ঘিবা ও ধান্যখোলা সীমান্তের পাচারকারীরা অনেক বেশি সক্রিয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বেনাপোল সীমান্ত থেকে বিজিবির অভিযানে এক বছরের এক পরিসংখ্যানে জানা যায় উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও মাদকের মধ্যে রয়েছে ২৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪১টি ম্যাগজিন, ১০৫টি গুলি, প্রায় ৫৫ হাজার ৪৯৮ বোতল ফেনসিডিল, ৯৫৩ কেজি গাঁজা, ৫৫০ বোতল দেশি-বিদেশি মদ ও ১৮৫০ পিস ইয়াবা। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে প্রায় ৪১ কেজি ৭৭২ কেজি স্বর্ণ ও ৭ লাখ ৩৮ হাজার ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময়ে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ৩৭৮ জনকে আটক করে বিজিবি,পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা।

বিজিবি বলছেন, তারা সব ধরনের পাচার রোধে আন্তরিক হয়ে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে পাচারকারীদের তালিকাও হয়েছে। সবার সহযোগিতা পেলে খুব শিঘ্রই পাচার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আসবে। জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল সীমান্তের চোরাচালানরা অনেকটা নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত ঘেঁষে এমনভাবে মানুষের বসবাস, শনাক্ত করা কঠিন কোনটা বাংলাদেশ আর কোনটা ভারত। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে পাচারকারীরা সহজে এপার-ওপার যাতায়াত করে থাকে। তবে মাদক পাচার রোধে বিজিবি কঠোর থাকলেও অনেকটা উদাসীন ভারতের সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ সদস্যরা। এতে অনায়াসে মাদক দ্রব্যসহ বিভিন্ন চোরাচালান পণ্য অনায়াসে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।

তবে বিজিবির কঠোর নজরদারীতে এক বছরে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে প্রায় ১ শ’ ২০ কোটি টাকা মূল্যের মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র ,ডলার ও স্বর্ণসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান পণ্য আটক হয়েছে।
বেনাপোল ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বলেন, আটক মাদক ব্যবসায়ীদের জামিন বিলম্বিত করা গেলে মাদকপাচার প্রতিরোধে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে।

এ প্রসঙ্গে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম রেজা জানান, চোরাচালানের মূল হোতারা নিজেরা স্বর্ণ, অস্ত্র ও মাদকসহ চোরাই পণ্য বহন করেন না। এ কারণে তাদের হাতেনাতে আটক করা সম্ভব হয় না। তবে কোনো কোনো সময় বহনকারীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে মূল হোতাদের আটক করে জেলে পাঠানো হয়। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ না থাকায় তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

মহসিন মিলন। বেনাপোল প্রতিনিধি।