গাজীপুরের কালিয়াকৈরে এক ঘুমন্ত দম্পতিসহ চারজন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। সোমবার সকালে রান্নার সময় গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে মালামালসহ কলোনীর ৪৫টি কক্ষ পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। অগ্নিকান্ডে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে কম্বল ও খাবার বিতরণ করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন।

নিহতরা হলেন- গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানার সুন্দাইল এলাকার হোদা মিয়ার ছেলে মিলন মিয়া (৪০), তার স্ত্রী মুন্নী বেগম (৩০), একই থানার জরীপপুর এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে ফরহাদ হোসেন (৪০) এবং একই জেলার পলাশবাড়ি থানার জগন্নাথপুর এলাকার ওসমান গনির ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩০)। এদের মধ্যে মিলন ও তার স্ত্রী মুন্নী কালিয়াকৈরের ফারইষ্ট কারখানার কর্মী ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের কালিয়াকৈর ষ্টেশনের ষ্টেশন অফিসার কবিরুল আলম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর পূর্বপাড়া এলাকার নব্বই কলোনিতে স্থানীয় বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা স্বপরিবারে বসবাস করেন। রবিবার সন্ধ্যায় লিটন মিয়ার বাড়ির কলোনীর জনৈক ভাড়াটিয়া নাসিমা রান্নার জন্য দোকান থেকে গ্যাসের একটি সিলিন্ডার আনেন। সিলিন্ডারটি লিকেজ থাকায় গ্যাস নির্গত হতে থাকে। সোমবার ভোর টার দিকে কলোনীর অধিকাংশ লোকজন ঘুমিয়ে ছিলেন। এসময় কারখানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে ওই ভাড়াটিয়া রান্না করছিলেন। হঠাৎ চুলার আগুন সিলিন্ডারের লিকেজ থেকে নির্গত গ্যাসের সংস্পর্শে এলে আগুন পুরো রান্না ঘরসহ পাশর্^বর্তী মোহাম্মদ আলী ও জনির বাড়ির কলোনীর কক্ষগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এসময় টের পেয়ে অন্যরা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেও মিলন মিয়া ও তার স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলেন। অপর দু’ভাড়াটিয়া ফরহাদ হোসেন ও আব্দুল আউয়াল পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেও পরে ঘরে থাকা বেতনের টাকার জন্য কক্ষে গিয়ে আটকা পড়েন। তারা রবিবার কারখানা থেকে বেতনের টাকা উত্তোলন করেন। স্থানীয়রা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দীর্ঘ চেষ্টার পর সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। পরে তল্লাশি চালিয়ে ওই চারজনের পুড়ে যাওয়া অঙ্গার দেহ ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কলোনীর ঘরে আটকা পড়ে ওই চারজন আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হন। আগুনে পুড়ে লিটন মিয়া, মোহাম্মদ আলী ও জনির বাড়ির টিনের তৈরী কলোনীর ৪৫টি কক্ষ মালামালসহ ভষ্মীভুত হয়। নিহতরা সবাই লিটন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমিন তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে অগ্নিকান্ডে নিহতদের প্রত্যেককে দাফনের জন্য তাদের পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে কম্বল ও খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থদের ঘর তৈরীর জন্য টিন ও অর্থসহ অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।