খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁ। শীত আর হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে জেলার ১১টি উপজেলার মাঠে মাঠে বোরো ধান আবাদ ও রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে এখন। ভোরের আলো ফোটার আগেই কোমর বেঁধে ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালে বীজতলায় ধানের চারা পরিচর্যার পাশাপাশি জমি চাষের কাজ চলছে পুরোদমে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

নদীর পাড়ে, খালের ধারে, রাস্তার পাশের জমিতে, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে জলসেচ আবার কোথাও চলছে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ। বোরো ধান রোপনের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। চলছে জমি প্রস্তুত, ক্ষেত পরিচর্যা আর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপনের কাজ। কোথাও আবার কৃষান কৃষানীদের গুন গুন গানে মুখরিত।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শামসুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন যদিও চলতি বোরো মওসুমে জেলায় বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে। বিগত আমন মওসুমে কৃষকরা ধানের নায্য মুল্য পাওয়ার ফলে বোরো মওসুমে এই লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত ৮৫ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি মওসুমে কৃষকরা হাইব্রীড এবং উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের ধান রোপন করছেন। হাইব্রীড জাতের মধ্যে সিনজেনটা-১২০৩ ও ছক্কা এবং উফশী জাতের মধ্যে কাটারী, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-ধান ২৯, ব্রি-ধান ৫০, ব্রি-ধান ৮১, জিরাশাইল ইত্যাদি ধান রোপন করছেন জেলার কৃষকরা।

কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে চলতি মওসুমে জেলায় মোট ১ লাখ ৮০ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ১১ হাজার ৭১০ হেক্টর এবং ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৫ হেক্টর উন্নত ফলনশীল উফশী জাতের। চালের আকারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৫৮ হাজ্রা ৬৯৬ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হাইব্রীড জাতের ৬২ হাজার ৭৬৬ মেট্রিক টন এবং উফশী জাতের ৬ লক্ষ ৯৫ হার্জা ৯৩০ মেট্রিক টন।

উপজেলা ভিত্তিক বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা হচ্ছে নওগাঁ সদর উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৪ হাজার ৮৩০ হেক্টরসহ মোট ১৭ হাজার ৯৫৫ হেক্টর। রানীনগর উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ৭৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৮ হাজার ১২৫ হেক্টরসহ মোট ১৮ হাজার ২০০ হেক্টর। আত্রাই উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৫ হাজার ৩৫ হেক্টরসহ মোট ১৮ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। বদলগাছি উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ২৪৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ১০ হাজার ৭৪৫ হেক্টরসহ মোট ১০ হাজার ৯৯০ হেক্টর। মহাদেবপুর উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ২৮০ হেক্টর ও উফশী জাতের ২৬ হাজার ৩২০ হেক্টর। পত্নীতলা উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ১৩০ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৯ হাজার ২৬০ হেক্টর। ধামইরহাট উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ১ হাজার ৩৪৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর। সাপাহার উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর ও উফশী জাতের ৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর। পোরশা উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ৫২৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ৭ হাজার ৫২০ হেক্টর। মান্দা উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ২ হাজার ১১৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৭ হাজার ৭৩৫ হেক্টর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর ও উফশী জাতের ১৯ হজার ২৪০ হেক্টর।

মোঃ খালেদ বিন ফিরোজ