মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ে আহত হওয়ায় কিস্তি দিতে পারেনি দিনমজুর একরামুল হক (একরা)’র স্ত্রী শিউলী বেগম। এঘটনায় স্বামী একরাকে ডেকে নিয়ে অফিসের রুমে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার এনজিও পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৩০ জানুয়ারী) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার মেডিকেল মোড়স্থ দইখাওয়া “রোডের পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন” (পপি) এ ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও আওয়ামিলীগ নেতা এসে তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দিনমজুর একরামুল হক বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরের অভিযোগ করবেন বলে জানান।

জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রাম এলাকার মৃত্যু সোলেমান গনির ছেলে দিনমজুর মোঃ একরামুল হক অরফে একরা (৪৮)। আর্থিক অনাটনের কারনে গত ২৬ নভেম্বর স্থানীয় এনজিও “পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)” অফিস থেকে স্ত্রী শিউলী বেগমের নামে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সাপ্তাহিক দুটি কিস্তি দেয়ার পর একরামুলের মা গত ১২ ডিসেম্বর মারা যায় এবং হঠাৎ করে শফিপুরের গার্মেন্টস থেকে বাসা যাবার পথে ১৮ জানুয়ারী সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় বড় মেয়ে শারমিন বেগম (২১)। মায়ের কুলখানি ও ঢাকায় গিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করার ফলে ২-৩ সপ্তাহে পপি অফিসের সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে পারেনি একরামুল দম্পতি। কিন্তু ঐ এনজিও পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনের কাছে একরামুল দম্পতির এ দুঃখের কথার কোন মুল্য নেই। তারা শুধু কিস্তির টাকার জন্য তাদেরকে চাপ দিতে থাকে।

কিস্তি দিতে না পারায় আজ শনিবার সকাল ১০টার দিলে পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন ফোন দিয়ে একরামুলকে ফোন করে তার অফিসে দেকে ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে এবং পরিবারের লোকজনকে কিস্তির টাকা নিয়ে আসার জন্য একরামুলকে ফোন দিতে বলে। কিস্তির টাকা দিতে না পারলে তাকে রুমে তালাবদ্ধ অবস্থা থাকতে হবে বলে জানায়।
একরামুল এদিক ওদিকে বিভিন্ন স্থানে ফোন দিয়ে কোথাও টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে ম্যানেজার মন্তাজ হোসেনকে ১০-১২ ফেব্রুয়ারী মেয়ের বেতন পেলে কিস্তির সব টাকা পরিশোধ করে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও কোন কাজ হয়নি।

পরে খবর পেয়ে একরামুলের পরিবার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী, ঐ ওয়ার্ডের আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম ও সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে পপি অফিস থেকে একরামুলকে উদ্ধার করে তার পরিবার।
দিনমজুর একরামুল হক একরা বলেন, মায়ের মৃত্যু ও সড়ক দুর্ঘটনায় মেয়ের গুরুতর আহত হলে একটি মাস আমাকে অনেক ঝামেলার মধ্যে সময় পার করতে হয়। ফলে আমি ২-৩টা কিস্তি দিতে পারিনি। এজন্য পপি অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন আজ সকালে আমাকে অফিসে ডেকে এনে অনেক গালমন্দ করে এবং ঘাঢ় ধাক্কা দিয়ে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এ ঘটনায় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিবেন বলে জানান।
এবিষয়ে কথা হলে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফ আলী ও ঐ ওয়ার্ডের আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, একরামুলের মায়ের মৃত্যু ও মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় কারনে ২-১টা কিস্তি দিতে পারেনি। তাই বলে কিস্তির টাকা আদায় করার জন্য একরামুলকে পপি অফিসের ডেকে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা ঠিক করেনি।

স্থানীয় এনজিও “পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)” অফিসের ম্যানেজার মন্তাজ হোসেন ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করে বলেন, ঋণ নেবার পর একরামুলের ৪টা কিস্তি বাকি রয়েছে। এজন্য তালে অফিসে ডাকা হয়েছে।

তবে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ঐ এনজিও “পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)” এর এরিয়া ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম বলেন, আজকের এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত। এবিষয়ে বিকালে বসে একটা ফয়সালা করা হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিউল আমিন বলেন, এবিষয়ে আমাকে কেউ কিছু বলেননি, আপনার মুখেই শুনলাম। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।