চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা সৃষ্টির মেয়াদ তিন বছর। এই গত তিন বছরে সুনির্দিষ্ট খাত থেকে উৎস আয়কর কর্তন ও সংগৃহীত রাজস্ব তহবিলের বরাদ্দে কোটি কোটি টাকার ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। কিন্তু এসব আদায়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়ায় অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য পাওয়া যায়, উপজেলা পরিষদ কতৃক আদায়কৃত এসব অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এক টাকাও জমা হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন উপজেলার একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং ইজারাদাতাগণ। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে আদায়কৃত এই কোটি কোটি টাকা কোথায় এবং কার কাছে রয়েছে? কোন একাউন্টে তা জমা রয়েছে তারও কোন সঠিক ব্যাখা দিতে পারেননি উপজেলা হিসাব শাখা।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক এর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এডিসি মো. আবু হাসান সিদ্দিক বলেন, ‘তিন বছর যাবত সরকারি কোষাগারে ভ্যাট-ট্যাক্স জমা হয়নি এখন শোনলাম। কেন জমা হয়নি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

উপজেলা সূত্রে জানা যায়, ঠিকাদার, ইজারাগ্রহীতাগণ এবং সরবরাহকারীকে বিল প্রদানকালে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ৫২ ধারা ও ১৯৮৪ সালের আয়কর বিধিমালার ১৬ বিধি অনুসারে উৎস কর কর্তন করা হয়। পরে তা নির্দিষ্ট চালান ফরমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু কর্ণফুলীতে তা যথাযথভাবে জমা না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের রাজস্ব আয় যা পরবর্তীতে উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে স্থানান্তরিত হয়। যে তহবিলের অর্থ দিয়ে দরপত্র, রিকুয়েস্ট ফর কোটেশন (আরএফকিউ) পদ্ধতিতে এবং প্রজেক্ট ইমপ্লেমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) পদ্ধতিতে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়িত হয়। এসব বাস্তবায়িত কাজের অধিকাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এমনকি নিয়ম অনুযায়ী পরিশোধিত বিলে কাজের ভ্যাট, আয়কর কর্তন করা হয়েছে। অথচ ভবিষৎ অডিট টিমের কাছে উপস্থাপনের জন্য এলজিইডি চালান কপি চাইলেও তা দিতে ব্যর্থ হন উপজেলা পরিষদ।

এই ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স সংক্ষেপে ভ্যাট ও ট্যাক্সের অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না হওয়ায় পুরোটাই কোন দুষ্টজনদের পকেটে কিনা তা নিয়েও পুরো উপজেলায় আলোচনা হচ্ছে। সচেতনমহল বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদক ও কন্ট্রোল জেনারেল অফ একাউন্টস (সিজিএ) এর অডিট কামনা করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে গত তিন অর্থ বছরে সরকারের কোটি কোটি টাকার ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে সরকারের ক্ষতি করে চলেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখারও প্রয়োজন রয়েছে বলে সাধারণ মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা বলেন, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। গত তিন অর্থ বছরে ভ্যাট-ট্যাক্স সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি সেটি সত্য। তবে কেন অতীতে জমা হয়নি তা আমি বলতে পারব না। তবে বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অপরদিকে, উপজেলায় বিভিন্ন খাত থেকে আদায়কৃত রাজস্বের ভ্যাট-ট্যাক্স যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা হয় কিনা তা জানতে চাইলে ইউএনও অফিসের কনফিডেনশিয়াল এ্যাসিস্টেন্ট (সিএ) দীপু চাকমা বলেন, ‘আমরা কিছু দিন আগে চালান ফরমে সব অর্থ জমা দিয়েছি। জমা প্রদানের চালান ফরম রয়েছে কিনা জানতে চাইলে নীরবে ফোনলাইন কেটে দেন।’পরে খবর নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতপক্ষে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোন অর্থই সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। তিনি সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।’

এছাড়াও কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। বরাদ্দের সেই অর্থ উপজেলা এলজিইডি হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উত্তোলন করে নিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চোধুরী ও তৎকালিন ইউএনও মো. নোমান হোসেন।

পুরো বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে সদ্য বদলি হওয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফরের এক প্রকৌশলী জানান, ‘ভ্যাট ট্যাক্সের বিষয়ে এলজিইডি থেকে কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি ইস্যু করা হয়েছিলো। কিন্তু উপজলা পরিষদের চেয়ারম্যান বার বার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। পরে একদিন ইনকাম ট্যাক্সের অফিসার আসলে সিএ দীপু চাকমা জানিয়েছিলেন, পরিষদের একাউন্ট প্রাইভেট ব্যাংকে তাই চালানে টাকা জমা দিতে পারছেন না। প্রতি চালানে তিনশ’ টাকা বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। যদিও এই বিষয়টি আমাদের তখন জানাননি উপজেলা পরিষদ। অথচ ওই সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অথচ এখনও অবধি কর্ণফুলীর ভ্যাট-ট্যাক্স রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা আমি বলতে পারি না।’
প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া যায়, উপজেলা সৃষ্টির প্রথম অর্থবছর ২০১৭-২০১৮ ছিল পটিয়ার অধীন। পটিয়া থেকেই ওই অর্থ বছরে আরোপিত ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়। পরবর্তী ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে উপজেলা রাজস্ব তহবিলের আওতায় অনুমোদিত মোট স্কীমের বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৭৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫০০টাকা। যার মধ্যে দরপত্র মূল্য ছিল ৩ কোটি ৬৪ লক্ষ ২ হাজার ৫০০টাকা, আরএফকিউ পদ্ধতিতে ৩০ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এবং পিআইসি পদ্ধতিতে ৭৯ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা উপজেলা রাজস্ব তহবিলের হিসাব হতে উন্নয়ন তহবিলে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট অর্থ বছরের বরাদ্দে নিয়মমতে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট আসে ৩৫ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯১২ টাকা ও ৫ শতাংশ ট্যাক্স নির্ধারিত হয় ২৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ২৭৫ টাকা। সাড়ে ১২ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্সের অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৮৭ টাকা। এসব অর্থ উপজেলা পরিষদ কর্তন করলেও এখনো সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। পরের অর্থ বছর ২০১৯-২০২০ উপজেলা রাজস্ব তহবিলের সরকারি বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬০০ টাকা। এই অর্থে সাড়ে ১২ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স নির্ধারিত হয় ৫৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ২০০ টাকা। এই ভ্যাট ট্যাক্সও সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। শুধুমাত্র গত নভেম্বর মাসের শুরুতেই ওই বরাদ্দ থেকে টেন্ডার নোটিশ করা হয় ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ১২ হাজার ৪৪ টাকা (প্রায়)। টেন্ডার বিহীন অলস পড়ে রয়েছে আরও ১ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৫৪ টাকা। এই টাকা কিভাবে কোন খাতে খরচ করা হবে তাও এখন স্পষ্ট নয়।
জানা যায়, সরকারি নিয়মে পিআইসির এক প্রকল্পে দু’লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়। আর আরএফকিউ নামক প্রকল্পের সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয় ১০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এসব প্রকল্প অনুমোদন করতে গেলে সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে কমিটিতে রেজুলেশন করার বিধান রয়েছে। যদিও কর্ণফুলীতে তা কার্যকর করা হয় না।

একাধিক ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী নিজের একক ক্ষমতাবলে ইচ্ছেমতো প্রকল্প অনুমোদন ও কাটছাঁট করেন। এমনকি বিগত ৪ বছরে কোন চেয়ারম্যানদের চাহিদা মতো প্রকল্প/ স্কীম নেওয়া হয়নি। যদিও নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদেরও জনগণের কাছে কিছু প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতা ছিল। কিন্তু সে সুযোগ গত ৪ বছরে কোন জনপ্রতিনিধি পাননি। কারণ ফারুক চৌধুরী তার একক ক্ষমতাবলে সকল প্রকল্প নয়-ছয় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ২ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা রাখেন না। বহুবার চেষ্টা করেও সুযোগের অভাবে চেয়ারম্যানরা এ বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি।
এ বিষয়ে শিকলবাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি কেন উপজেলার কোন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাহিদা মতো প্রকল্প/ স্কীম নেওয়া হয় না। গত সাড়ে ৪ বছরে উপজেলা পরিষদ নিজেদের ইচ্ছামতো এসব প্রকল্পের কাজ করে। যা আমরা একাধিকবার সব ইউএনও’কে জানিয়েছিলাম কিন্তু হয়তো অদৃশ্য কারণে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আর কতই বা সময় আছে আমাদের। অনাস্থা দিয়েও কি হবে। তাই চেয়ারম্যানেরা নীরব রয়েছে।’

তথ্য সুুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্দেশনা পেয়ে উপজেলা পরিষদকে নিয়ম অনুযায়ী চিঠি দিয়ে জানানো হয়, উন্নয়ন তহবিলের (এডিপি/রাজস্ব) অর্থায়নে উপজেলা পরিষদ কতৃক চলতি অর্থ বছরের প্রকল্প গ্রহণের শেষ সময় পুর্ববর্তী ৩১ মার্চ ও বাস্তবায়নের শেষ সময় ৩১ মে নির্ধারণ করেন। নির্দেশনা মতে অর্থ বছরের প্রকল্প ও দরপত্র কার্যক্রম ৩১ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে বলা হয়। সঠিক সময়ে ব্যয় করতে না পারলে ব্যর্থতা বিবেচনার কথাও জানানো হয়। এরপরেও ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রাজস্বের টেন্ডার কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি। অথচ পাশের উপজেলা পটিয়া ও আনোয়ারায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে। ফলে সময় উপযোগী নিদির্ষ্ট অর্থ বছরে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় সরকারি হিসাবে পড়ে রয়েছে আরো ৪ কোটি ৪৭ লক্ষ ৫ হাজার ২০০ টাকা মতো (প্রায়)। যা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় না হওয়ায় ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

ওদিকে, পরপর গত তিন অর্থবছরে কর্ণফুলী উপজেলা থেকে কোন ধরনের ভ্যাট-ট্যাক্স সরকারি কোষাগারে জমা না হওয়ায় কোন ধরনের অডিট ও পরিচালনা করা হয়নি। ফলে উপজেলা পরিষদ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে অনেক প্রশ্নের উদয় হয়েছে। প্রতিটি অর্থ বছরের ভ্যাট ট্যাক্সের কোটি কোটি টাকা যদি সরকারি খাতে জমা না হয়, তাহলে এসব টাকা কোথায় রয়েছে ? সচেতনমহলের দাবি, সরকারি টাকা সরকারি খাতে জমা না দিয়ে কারো কাছে রাখার নিয়ম রয়েছে কিনা? এসব হযবরল অবস্থা দেখে অনেকে আবার দুদকের নজর প্রত্যাশা করেছেন।

নিয়ম রয়েছে, স্থানীয় সরকারের রাজস্ব তহবিলে অর্থ বছর শেষ হওয়ার পরবর্তী বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাজস্ব তহবিলের জমাকৃত অর্থ উন্নয়ন তহবিলে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। উক্ত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে করতে হয়। কিন্তু কর্ণফুলীতে এই বিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশলী জানেই না যে, অর্থ বছর শেষে উন্নয়ন তহবিলে কত টাকা স্থানান্তরিত হলো। স্কীম বাছাই কমিটির অনুমোদন ছাড়া কোন স্কীম গ্রহণ করা যায় না। উপজেলায় এই পর্যন্ত কোন স্কীম বাছাই কমিটির সভায় অনুষ্ঠিত হয়নি। তাহলে স্কীম অনুমোদিত হয় কি করে সেটাও বিবেচ্য বিষয়।

অনুসন্ধানে তথ্য মিলে, ২০১৭-২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরে কর্ণফুলী উপজেলার সমস্ত হাট বাজার, ঘাট, পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয় ইজারা দিয়ে যে অর্থ রাজস্বে খাতে জমা হওয়ার কথা সেই অর্থেরও কোন হদিস নেই। যদিও বা ব্যয় করা হয়। তবে কোন খাতে, কীভাবে ব্যয় হয়েছে তার কোনো ভাউচার দেখাতে পারেনি উপজেলা পরিষদ। খাতভিত্তিক আয় হলেও ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই। যা সরাসরি আত্মসাতের শামিল বলা যায়।
পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন করের ২ শতাংশ অর্থ উপজেলা পরিষদ গ্রহণ করে থাকেন। গত তিন বছরে কত টাকা জমা হয়েছে তারও কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা পরিষদ। জানা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে সরকারি সব দফতরে বিধি অনুযায়ী উৎসে কর কর্তন ও সঠিক সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যা লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের বিরুদ্ধে।

প্রচার রয়েছে, ৪৯০তম এই কর্ণফুলী উপজেলায় নানা অনিয়মের কারণেই সরকারি অফিসার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে দুরত্ব তৈরি হয়েছে। ফলে সমন্বয়হীনতার কারণে গত তিন বছরে পাঁচজন ইউএনও বদলি হয়ে অন্যত্রে চলে যায়। অপর একটি বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, কলকারখানা, গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরী ও বাসা বাড়ি নির্মাণে ইমারত-নকশা অনুমোদনে উপজেলায় আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৭৫টি। অভিযোগ উঠেছে, এরমধ্যে ৩ টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ও ২ টি গার্মেন্টস কারখানা থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হচ্ছে। অনেকটা গোপনে দরাদরি করছে একটি মহল। বিষয়টি নিয়েও নানা জল্পনা কল্পনা চলছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, আসলে ব্যাংকিং একাউন্ট জটিলতার কারণে সরকারি কোষাগারে ভ্যাট ট্যাক্সের টাকা জমা হয়নি। বিষয়টি এখন আপনাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। যেহেতু আমি ঢাকায় রয়েছি। উপজেলায় আসেন বসে বিস্তারিত জানাবো বলে ফোনলাইন কেটে দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর একক চেষ্টায় ২০১৬ সালের ৯ মে কর্ণফুলী থানাকে উপজেলায় উন্নীতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। ২০১৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ করে। ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উপজেলার দায়িত্ব নেন ফারুক চৌধুরী।