গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা গার্মেন্টস এন্ড ওয়াশিং কারখানার ক্যামিকেল গুদামে শনিবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কারখানার এক শ্রমিক নিহত এবং অন্ততঃ ৪২জন অগ্নিদ্বগ্ধ ও আহত হয়েছেন।

নিহতের নাম মাসুম সিকদার (২৩)। ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার চর কুসুমহাটি গ্রামের সূর্য সিকদারের ছেলে মাসুম সিকদার ওই কারখানার ওয়েল্ডিং অপারেটর ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকেরা জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার দক্ষিণ ভাংনাহাটী এলাকায় ঢাকা গার্মেন্টস এন্ড ওয়াশিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা শনিবার সকালে কাজ করছিলেন। এসময় কারখানার গেইট বন্ধ করে তালা দেওয়া ছিল। সকাল ১০টার দিকে কারখানার ৫তলা একটি ভবনের নীচ তলার ক্যামিকেলের গুদামে হঠাৎ আগুনের সূত্রাপাত হয়। মুহুর্তেই আগুন পুরো গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। কারখানায় আগুন ও ধোঁয়া দেখে শ্রমিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তারা আত্মরক্ষার্থে কারখানা থেকে বের হতে চাইলে কর্তৃপক্ষ গেট খুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে কারখানার ভিতরে আটকে পড়া শ্রমিকদের মাঝে আরো বেশি আতংক দেখা দেয়। আতংকিত শ্রমিকরা কারখানার থেকে বের হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করতে থাকলে কয়েক শ্রমিক আহত হন। এদিকে আগুনের ধোঁয়া ও অগ্নিকান্ডে ক্যামিকেলের সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে এবং দগ্ধ হয়ে বেশ কয়েক শ্রমিক আহত হন। একপর্যায়ে আগুন নেভাতে কারখানার পাশর্^বর্তী ভবনের কিছু শ্রমিক ও কর্মচারী এগিয়ে গেলে ক্যামিকেলের বিষাক্ত গ্যাসে ও ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা ডাক চিৎকার ও আহাজারি করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তৃপক্ষ গেট খুলে দিতে বাধ্য হলে শ্রমিকরা ভবন থেকে বের হতে থাকেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু এর আগেই কারখানার শ্রমিক কর্মচারীরা প্রায় আধা ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এঘটনায় একজন ঘটনাস্থলে নিহত এবং অন্ততঃ ৪২ জন আহত ও অগ্নিদগ্ধ হন। স্থানীয়রা পুলিশের সহায়তায় আহতদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও শ্রীপুরসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করে। পুলিশ নিহত মাসুম সিকদারের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। অগ্নিকান্ডে গুদামের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কারখানার স্যাম্পল শাখার শ্রমিক আবু হানিফ বলেন, ক্যামিকেলের গুদামে অগ্নিকান্ডের কারণে ক্যামিকেল থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে এক শ্রমিক সেখানে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে গেলে তিনিও (হানিফ) শ^াসকষ্ট হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তিনি জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনার আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রণয় ভূষণ দাস জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অসুস্থ্য ৩২ জনকে চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাদের বেশিরভাগই ধোঁয়া ও ক্যামিকেলের বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শ^াসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। কয়েকজনের দেহে সামান্য দ্বগ্ধ ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এদের মধ্যে আহত ৪জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড ও ৩জনকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ জানান, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিভিয়ে ফেলে। আগুনে একজন নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, পুলিশ ক্যামিকেলের গুদাম থেকে মাসুম সিকদারের লাশ উদ্ধার করেছে। তিনি ক্যামিকেলের বিষাক্ত গ্যাসে শ^াসকষ্ট ও আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থদের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।