২০ বছর পর শরীয়তপুরে চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগ নেতা ও শরীয়তপুর জজকোর্টের সরকারী কৌশলী (পিপি) অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ছোট ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলার রায় আজ রোববার দুপুরে ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে ছয়জনকে ফাঁসি, চারজনের যাবজ্জীবন, তিনজনকে ২ বছর করে স্বশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের আদেশ করেছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন।

এ মামলায় ৪০ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ে বাদী পক্ষ পুরোপুরি সন্তোষ প্রকাশ করেনি। তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আসামি পক্ষ বলছেন ন্যায় বিচার পায়নি। তারা ও উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

মামলার বিবরণে ও বাদীপক্ষ জানান, ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর শরীয়তপুর জজকোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেনকে আওয়ামী লীগের সভা চলাকালে নিজ বাসায় প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত হাবিব বাদী হয়ে তৎকালীন শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রায়ত কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ ৫৪ কে আসামি করে পালং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ১ নম্বর আসামিসহ কয়েকজনের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। মামলার বাদীনি নিহত পিপির স্ত্রী জিন্নাত হাবিব অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন। নিম্ম আদালত নারজি না-মঞ্জুর করে। পরে উচ্চ আদালতে নারাজি মঞ্জুর করেন।

পুলিশ তদন্ত করে পুনরায় ৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর আসামি পক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিভিশন করে মামলাটির কার্যক্রম বিলম্বিত করে। এরই মধ্যে আসামি কেএম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ ও শাহজাহান মাঝি মারা যায়। কিছুদিন আগে এ মামলার বাদীনি জিন্নাত হাবীব ও মারা গেছেন।

২০ বছর মামলাটির বিচার কাজ আটকে থাকার পর পুনরায় বিচার কাজ শুরু হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী নিহত পিপি হাবিবুর রহমান ও বাদীনির বড় ছেলে প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমানের স্বাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। এ মামলায় ২৮ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ করে। এ মামলায় ৬ জন আসামি শাহিন কোতোয়াল, শহীদ কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, মজিবুর রহমান তালুকদার ও সলেমান সরদারকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

রায়ে মামলার অন্যতম আসামি সরোয়ার হোসেন (বাবুল তালুকদার), বাবুল খান, ডাবলু খান ও টোকাই রশিদকে যাবজ্জীবন স্বশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাস করে কারাদণ্ডাদেশ প্রদান করে। এ মামলায় মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেন মজনু সরদারকে ২ বছরের স্বশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। মামলায় বাকি ৪০ জন আসামি নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শহীদ তালুকদার, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত বাবুল তালুকদার ও ২ বছর কারাদণ্ড প্রাপ্ত মজনু সরদার পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মামলার আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান এবং সরকার পক্ষে ছিলেন পিপি অ্যাডভোকেট মীর্জা হজরত আলী।

এ বিষয়ে পিপি অ্যাডভোকেট মীর্জা হজরত আলী বলেন, ‘মামলায় বাদীপক্ষ পুরোপুরি ন্যায় বিচার পায়নি। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মামলায় আসামিরা ন্যায় বিচার পায়নি। তারাও উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।’