গাজীপুরে মহিলা শিশু ও কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র থেকে ১৪জন হেফাজতী পালিয়েছে। বুধবার গভীর রাতে গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার মহিলা, শিশু ও কিশোরীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র থেকে তারা পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে চারজন বাক প্রতিবন্ধিসহ ৭জনকে বৃহষ্পতিবার ভোররাতে জয়দেবপুর রেল স্টেশন এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাসন থানাধীন ভোগড়া মোগড়খাল এলাকাস্থিত মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতীদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্র ভবনের তৃতীয় তলায় ২৮জন হেফাজতি ছিল। এরমধ্যে বুধবার গভীর রাতে ১৪ হেফাজতী কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায়। তারা প্রথমে মূল ভবনের তৃতীয় তলার দক্ষিণ পাশের স্টোর রুমের জানালার গ্রীল কেটে ও ভেঙ্গে ফেলে। পরে ওড়না দিয়ে বানানো রশি বেয়ে নীচে নেমে প্রায় ২৫ ফুট উচু দেওয়াল টপকে কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যায়। বিষয়টি টের পেয়ে আবাসন কেন্দ্র থেকে পুলিশকে জানানো হলে রাতেই পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান শুরু করে। রাত আড়াইটার দিকে জয়দেবপুর রেল স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পলাতকদের মধ্য থেকে চারজন বাক প্রতিবন্ধিসহ ৭ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপর ৭জনকে উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পলাতক হেফাজতীদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।

এদিকে, কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে বৃহষ্পতিবার বিকেলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ ছায়েদুল ইসলাম, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রামচন্দ্র দাস এবং সকালে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জাকির হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের স্টোর কিপার আব্দুর রহমান মোল্লা বাদি হয়ে ১৪ জনকে আসামি করে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলো- নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানার ইলমদি গ্রামের আফজাল হোসেনের মেয়ে লামিয়া (১৮), ঠিকানা না জানা আজিজুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া (১৫), নরসিংদী পলাশ থানার ঘোড়াশাল এলাকার মাহমুদা আক্তার তুলি, বাক প্রতিবন্ধী শাবানা (১৭), জেসমিন (১৮), লুৎফুন্নাহার (২০) ও সুরমা (১৭)।

অপর পলাতক ৭জন হেফাজতী হলো, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা থানার পাঠগ্রামের মিলন মিয়ার মেয়ে মিম আক্তার (১৭), পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থানার দেউলী এলাকার সৈয়দ মিল্টনের মেয়ে মলি আক্তার (১৭), নরসিংদীর শিবপুর থানার ধনুয়া এলাকার শাহ আলমের মেয়ে মনিরা (১৫), মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার বড় নওয়াপাড়া এলাকার কামাল সরদারের মেয়ে বর্ণা আক্তার নিঝুম (১৫), ঢাকার আশুলিয়ার ওমর ফারুকের মেয়ে ফাহমিদা আক্তার রিয়া (১৬), নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানার মিজমিজ বাতান পাড়া মাদ্রাসা রোডের কবির মিয়ার মেয়ে তাসলিমা আক্তার (১৫) এবং একই জেলার বন্দর থানার বাঘবাড়ি এলাকার আব্দুর রশিদের মেয়ে জামিলা খাতুন সুইটি (১৭)।

তিনি আরো জানান, গত কয়েকদিন যাবৎ ভবনে ও গ্রীলে রংসহ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে শ্রমিকরা। ওই শ্রমিকদের সহায়তায় কেন্দ্র থেকে ওই ১৪ নিবাসী পালিয়ে যায় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কেন্দ্রের তালিকা অনুযায়ী খাবার সরবরাহ না করা, নি¤œ মানের খাবার সরবরাহ এবং ষ্টোর কীপারসহ কর্মচারীদের আচরণ ও নানা অনিয়ম নিয়ে উদ্ধারকৃতরা ক্ষোভ জানিয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম জানান, এখানে বাবা-মায়ের অমতে যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় বা বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যায় তাদের একটি অংশ এখানে থাকে। তাদের চিন্তা ভাবনা থাকে যে তারা কিভাবে পালিয়ে যাবে। যারা পালিয়ে গেছে তাদের মধ্যে এরকম সাত জন ছিল। যে সাতজনকে আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে চারজন বাক প্রতিবন্ধ¦ী ও তিনজন ভবঘুরে ছিল। তিনি আরো জানান এখানে জনবল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি রয়েছে আর খাবারের মানটিও বাড়াতে হবে। আজকে মন্ত্রনালয়ে সুপারিশ করা হবে যেন জনবল বাড়ানো হয়। এছাড়া এ কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য নারী আনসার মোতায়েন করা যায় কি-না সেব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে।