পাবনায় সরকারি নদীর জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বাড়ী ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করায় খনন করতে গিয়ে খননকৃত মাটি রাখা নিয়ে অবৈধ দখলদার ও খালপাড়ের বৈধ বসতিদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মানবাধিকার লংঘেœর সংবাদ পেয়ে হিউম্যান রাইটস্ ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের বাঁচতে চাই এর প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্থরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তাৎক্ষনিক ভাবে সেখানে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে ঘটনাটি জানার পরপরই জেলা প্রশাসন ও পাউবো কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিরসন হলেও আর্থিক ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ টি পরিবার। জানা যায়, পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের মনোহরপুর বড়ব্রীজ থেকে আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের তারাপাশা স্লুইচগেট পর্যন্ত পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া ১০ কিলোমিটার খাল খননে প্রভাবশালী দখলদারকে বাঁচাতে গিয়ে খালপাড়ের বৈধ বসবাসকারীরা চরম ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছেন। বুধবার খননকৃত পাড়ে মানববন্ধন করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট খালের একপাড়ের জায়গা দখল করে পাকা ঘরবাড়ি ও সীমানা ওয়াল নির্মাণ করেছেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী আলহাজ্ব তরিকুল ইসলাম। খাল খনন শুরুর আগেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার খালের দুপাড়ে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা ও গাছপালা সড়িয়ে ফেলার জন্য জানিয়ে দেয়। পর্যায়ক্রমে দু’পাড়ের অবৈধ ভাবে বসবাস করা বাসিন্দারা খালের জায়গা ছেড়ে দেন। খাল খননের মাটি খালের উপর সরকারি জায়গার উপরেই একসেভেটর মেশিন দিয়ে কেটে স্তুপ করা হয়। মনোহরপুর বড়ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে এসে দেখা দেয় বিপত্তি।

ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, অবৈধ ভাবে খালের দু’পাড় দখলকারী পাবনা বিগবাজারের চেয়ারম্যান আলহাজ তরিকুল ইসলাম নিজের দখলকৃত জায়গায় নির্মাণ করা বিল্ডিং বাড়ি ও নদীপাড়ে শক্তিশালী অবৈধ ভাবে গড়া সীমানা বাউন্ডারী রক্ষার জন্য অনৈতিক ভাবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ম্যানেজ করেন। ঠিকাদার ও তার মাটি কাটা সংশ্লিষ্টরা তরিকুল ইসলামের অবৈধ ভাবে দখল করা খালের জায়গায় বিল্ডিং বাড়ির আংশিক ও সীমানা প্রাচীর রক্ষার জন্য নদীর এক পাড়ের মাটি অন্যপাড়ে অতিরিক্ত ভাবে স্তুপ করায় কমপক্ষে ১৫ টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন; তাহের আলী, হাবিব বিশ্বাস, হেলাল, শাহীন, আতোয়ার, আছিয়া, শাহীন, হাশেম, সোহেল, জয়তুন, জয়নাল, মহসিনসহ প্রায় ১৫ জন।

জানা যায়, বুধবার সকালে মাটির স্তুপ ক্রমাগত বেশি উচুঁ হয়ে গড়িয়ে বসবাসরত বাড়িঘরের উপর পড়লে অধিকাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্থানীয় ভাবে বিষয়টি মিমাংশা করার জন্য এলাকাবাসী চেষ্টা করলেও তরিকুল ইসলাম এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি কারও কোন কথাই কর্ণপাত করেননি। ফলে স্থানীয়রা বিষয়টি পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ, পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, ঠিকাদারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেন।

খবর পেয়ে পাবনা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট রোখসানা মিতা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন, সরকারি সার্ভেয়ার, আমিন, খাল খনন কাজের ঠিকাদার, স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদারসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। দীর্ঘ সময় ধরে মৌজা ভিত্তিক জমি মেপে খালের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। সরেজমিন পরীক্ষা নীরিক্ষার পর আলহাজ তরিকুল ইসলাম সরকারি জায়গা অবৈধ ভাবে দখল করে বসতবাড়ি নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন এমন সত্যতা তারা খুঁজে পান। পরে সর্বসম্মতিক্রমে অবৈধ দখলদার তরিকুল ইসলামকে শর্তসাপেক্ষে অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি দেয়া হয় এবং সরকারি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠি ও সম্পদের ক্ষতি না করার শর্তে ঠিকাদারকে খাল খননের জন্য নির্দেশ দেয়া হয় বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে। পাবনা বিগ বাজারের চেয়ারম্যান আলহাজ তরিকুল ইসলামের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সংশ্লিষ্ট খাল খনন কাজের ঠিকাদার জাহিদুর রহমান মিঠু বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্বাবধানে আমাদের লোকজন কাজ করছে। এখানে অনিয়ম ও দূর্নীতি করার সুযোগ নেই। পাউবোর মেপে দেওয়া এবং লাল নিশানার চিহ্ন ধরেই আমরা খাল খনন করছি। অবৈধ দখলের বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। এ বিষয়ে এসি ল্যান্ড ভালো বলতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোখসানা মিতা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রনে একটি খাল খনন কাজ চলছে। খননকৃত মাটি রাখা নিয়ে স্থানীয় ভাবে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, খাল খনন নিয়ে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সেখানে গিয়ে খালের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে আসছি। পাশাপাশি অবৈধভাবে দখলদারকে দ্রুত জায়গা খালি করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
তথ্যমতে, চলতি বছরের গত ২২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের মনোহরপুর বড়ব্রীজ থেকে আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের তারাপাশা স্লুইচগেট পর্যন্ত পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সোয়া ১০ কিলোমিটার খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় পাবনা সদরের ডি-৬. এস-৬ এবং ডি-৪, এস-১১ প্রকল্পে মেসার্স সৌরভ ট্রেডার্স ও জাহিদুর রহমান নামের জয়েন্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। সোয়া ১০ কিলোমিটার খাল খনন কাজে নদীর প্রশস্ত হবে তলদেশ থেকে ৪০ ফুট এবং জায়গা ভেদে ৫/৭ ফুট গভীর খনন করা হবে বর্তমান গভীরতার চেয়ে।