যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ মারা গেছেন। ব্রিটিশ সময় গতকাল শুক্রবার সকালে ইংলিশ কাউন্টি বার্কশায়ারের উইন্ডসর দুর্গে ৯৯ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী রানি এলিজাবেথ তার পাশে ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে প্রিন্স ফিলিপের ৭৩ বছরের দাম্পত্য জীবনে ছেদ পড়ল। গতকাল বাকিংহ্যাম প্যালেস থেকে দেওয়া এক ঘোষণায় প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়। তার মৃত্যুতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন শোক জানিয়েছেন।

বাকিংহ্যাম প্যালেসের বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রানি এলিজাবেথ তার প্রিয়তম স্বামী প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করছেন। তিনি শুক্রবার সকালে উইন্ডসর দুর্গে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রাজপরিবারের অন্য সদস্যদেরও প্রিন্সের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে।

ডিউক অব এডিনবরার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

এর আগে সংক্রমণ ও হৃদযন্ত্রে সমস্যার কারণে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রিন্স ফিলিপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময় তার হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। দীর্ঘ ২৮ দিন হাসপাতালে থেকে গত ১৬ মার্চ প্রিন্স ফিলিপ বাড়ি ফেরেন। তবে প্রিন্স ফিলিপ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না বলে তখন জানানো হয়।

কৈশোরেই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ফিলিপের প্রতি অনুরাগ জন্মায় রানির। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত যাদের হাত ধরে, সেই জার্মানির অভিজাত মহলে ওঠাবসা ছিল ফিলিপের পরিবারের। তিনি ব্রিটেনে চলে এলেও তার পরিবারের অনেকেই জার্মানিতে থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি তার বোনদের বিয়েও হয়েছিল নাজি সংযোগ থাকা অভিজাত জার্মান পুরুষদের সঙ্গে। তাই ফিলিপের সঙ্গে রানি এলিজাবেথের বিয়েতে অনীহা ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবারের। তবে সব বাধা পেরিয়ে ১৯৪৭ সালে ২১ বছর বয়সে ফিলিপের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তৎকালীন ব্রিটিশ রাজকুমারী এলিজাবেথ। এর পাঁচ বছর পর এলিজাবেথ ব্রিটেনের রানি হন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে ফিলিপ ও এলিজাবেথের মতো আর কোনো দম্পতি এত দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকেননি। তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে রাজপরিবারের রক্ষণশীলতাকেও ভাঙতে কুণ্ঠা করেননি রানি এলিজাবেথ।

এরমধ্যে মৃত্যুর পর প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্য কখন ও কোথায় হবে তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। সময়মতো এ বিষয়ে সব কিছু প্রকাশ্যে আনা হবে বলে জানিয়েছে বাকিংহ্যাম প্যালেস। তবে জীবিতকালেই প্রিন্স ফিলিপ জানিয়েছিলেন যে, সাড়ম্বরপূর্ণ শেষকৃত্য হোক, এটা চান না তিনি। ওয়েস্ট মিনস্টার হলেও সমাধিস্থ হতে চান না বলে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই মতো ফ্রগমোর কটেজের বাগানেই তাকে সমাধিস্থ করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রিন্স ফিলিপের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সাবেক চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু শোক প্রকাশ করেছেন।