অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন-র‌্যাবের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। শুক্রবার (৯ এপ্রিল) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার চার জনের মধ্যে তিনজন সেনাবাহিনী এবং একজন বিমান বাহিনীর সদস্য। এ ঘটনায় জড়িত আরো দুই জন পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বিজিবি সদস্য এবং একজন সাধারণ মানুষ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা হলেও চারজনকে নিজ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিচার নিজ নিজ বাহিনীর আইন অনুযায়ী হবে। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) একটি নম্বর থেকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বলা হয়- তার (বাদী) বড় ভাই র‌্যাবের হেফাজতে রয়েছেন। থানায় কিংবা ডিবি পুলিশকে জানানো যাবে না। যদি থানা কিংবা ডিবি পুলিশকে জানান তাহলে আপনার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। এ কথা বলে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ফোনের লাইন কেটে দেন।

‌‌এজাহারে উল্লেখ করা হয়,পরবর্তীতে অনেকবার তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ফোন কেটে দেন। দুপুর দেড়টার দিকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আবারও জানান, বড় ভাইকে র‌্যাব অফিসের সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন, তার নামে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে। র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি মোবাইল ফোনে আমার ভাইকে তাদের সহযোগীদের দিয়ে মারধরের শব্দ শোনান। এরপর ভাইকে তারা মোবাইল ফোন দিলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে জানান- তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেদম মারধর করছে। পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত দুই-তিন জন ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্কের দিকে আসতে বলেন। থানা কিংবা ডিবি পুলিশকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমার ভাইয়ের ব্যবহৃত নম্বর হতে ফোন করে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা বলিয়ে দেয়। তখন আমি তার অবস্থান জানতে চাইলে তিনি পুনরায় হাত পা চোখ বাঁধা থাকার কথা জানান। ফলে তিনি কোথায় আছেন বলতে পারবেন না।

শুক্রবার ওই চার র‌্যাব সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ার পর র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেছেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে হাতিরঝিল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া চার সদস্যকে ইতোমধ্যেই র‌্যাবের কাছে আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত হবে। তদন্ত করে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তাহলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখানো হবে না। এই পর্যন্ত র‌্যাবে যতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাহিনী কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেয় না। র‌্যাবে অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়ার গড় শতভাগ।

তবে গ্রেপ্তার হওয়া র‌্যাব সদস্যদের পরিচয় জানাননি এই কর্মকর্তা। তারা কোন ব্যাটালিয়নের জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এরা নির্দিষ্ট কোনো ব্যাটালিয়নের নয়।