কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ির দরিয়ানগর পয়েন্টে আজ শনিবার সকালে ভেসে এসেছে আরেকটি বিশালাকৃতির তিমি। আনুমানিক ১০ টন ওজনের তিমি মাছটি লম্বায় ৪৩ ফুট ও প্রস্থে ১৪ ফুট। এর আগে একই সৈকতে গতকাল শুক্রবার ভেসে আসে ৪৪ ফুট লম্বা ও ১৬ ফুট প্রস্থের একটি তিমি। সেটির ওজন ছিল ১০ টনের মতোই। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সৈকতে আরেকটি তিমি ভেসে এসেছে।

শুক্রবার ভেসে আসে তিমিটি রাতেই সৈকতের বালুচরে পুঁতে ফেলা হয়েছে। আজ শনিবার ভেসে আসা তিমিটি সন্ধ্যা নাগাদ বালুচরে পুঁতে ফেলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে তিমিটি সৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। তিমিটি দেখতে ভিড় জমান উৎসুক লোকজন। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়।

ইনানী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার সকালে সাগর সৈকতে মাছ ধরতে গিয়ে তিমিটি দেখতে পেয়ে আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি। এরপর তিমি পাওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক লোকজন তা দেখতে আসেন। বন বিভাগ ও প্রশাসনের লোকজনও ঘটনাস্থলে আসেন।’

মেরিন লাইফ বিশেষজ্ঞ জহিরুল ইসলাম জানান, শনিবার পাওয়া তিমিটি ব্রাইটওয়েল প্রজাতির পুরুষ। ৪৩ ফুট দৈঘ্যের তিমিটির ব্যাস ১৪ ফুট।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ভেসে আসা দ্বিতীয় তিমির শরীরের কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর সমন্বয়ে নমুনা সংগ্রহের পর আগের মতো এটি মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে। মৃত্যু সঠিক কারণ বলা সম্ভব হচ্ছে। ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

সৈকতে তিমি মাছ ভেসে আসার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, গভীর সাগরে বড় জাহাজের ধাক্কায় অথবা হত্যার কারণে তিমিগুলোর মৃত্যু হতে পারে। তবে সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয়।

পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘দুই দিনে দুইটি তিমি কক্সবাজার সাগর উপকূলে ভেসে এসেছে। দুটি মাছের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে সাগরে বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ হয়েছে। অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গভীর সাগরে কোনো দুর্যোগ হয়েছে। এতে তিমিসহ সাগরের প্রাণীগুলো মারা পড়ছে।’

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সুলতান আল নাহিয়ান জানান, আঘাতের চিহ্ন দেখে মৃত্যুর কারণ বলা যাচ্ছে না। পরীক্ষা শেষে এটা বলা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানিয়েছেন, দ্বিতীয় তিমিটি পুরুষ জাতের। কী কারণে সাগরে এগুলো মারা পড়ছে এজন্য গবেষণা করতে হবে। শুক্রবার উদ্ধার হওয়া তিমির শরীরের বিভিন্ন অংশ নিয়ে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা বলেন, ‘শুক্রবার উদ্ধার হওয়া তিমিটি মাটিতে পুতে ফেলার ব্যবস্থা করেছি। শনিবার উদ্ধার হওয়া তিমিটিও একইভাবে পুঁতে ফেলা হবে। তবে এর আগে ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় শরীরের অংশ সংগ্রহ করা হবে।’

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘কক্সবাজার সৈকতে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি তিমি ভেসে আসার ঘটনাকে আমরা গুরুত্বসহকারে দেখছি। এগুলো নিয়ে কাজ করে এমন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে।’ এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৩ ও ২০২০ সালে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকতে মৃত তিমি এসেছিল বলে জানা যায়।