শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর (২৬) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো একটি মামলা রবিবার গাজীপুরের বাসন থানায় দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে গাজীপুরে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন।

ওসি মোহাম্মদ কামরুল ফারুক জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টেকনগর পাড়া এলাকার কফিল উদ্দিনের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি রবিবার এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি মাদানীর বিরুদ্ধে ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্র বিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অভিযোগ করেন। এতে তার বিরুদ্ধে মারাত্মক মিথ্যা, ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মীয় অনুভ’তিতে আঘাত, মানহানিকর তথ্য প্রকাশ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার মতো অপরাধে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কিছু বিপদগামী ধর্মীয় লেবাসধারী লোক দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি বিনষ্ট করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের বাড়িয়ালী নলজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ‘মারকাজুল নূর আল ইসলামিয়া মাদরাসায়’ বসে দেশদ্রোহ ও সরকার বিরোধী কার্যকলাপ এবং নাশকতা কর্মকান্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করে থাকেন। দেশ যখন সারা বিশ্বে সমাদৃত, তখন একাত্তরের পরাজিত কিছু অপশক্তি দেশকে পাকিস্থানের মতো অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা ওয়াজ মাহফিলের নামে ধর্মীয় বক্তব্যের আড়ালে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে। এদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম মাদানী ওরফে শিশু বক্তা অন্যতম। তার রাষ্ট্রদ্রোহী, মানহানিকর ও হেয়প্রতিপন্ন করে উস্কানী ও ভীতি প্রদর্শণমূলক বক্তব্য ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবে আপলোডের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, রফিকুল ইসলাম মাদানী অপরাপর ব্যক্তিদের সহায়তার সরাসরি সশস্ত্র জিহাদের ডাক দেন, এবং এক্ষুনি জিহাদের উপযুক্ত সময় বলে সবাইকে আহবান জানান। সংবিধান পরিপন্থী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল এ ধরনের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে উস্কানির একটি ভিডিও চিত্র গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘উম্মাহ ইসলামিক মিডিয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজে এবং ৪ এপ্রিল ‘বিডি নিউজ টিভি’ নামের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়। তার ওই বক্তব্যে সশস্ত্র জিহাদের আহবান রয়েছে। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ ও হেয় করে আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শণ পূর্বক উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঠেকাতে যুবকদের এয়ারপোর্টে ঘেরাও সহিংসতার আহবানও জানান তিনি। ফেসবুক, ইন্টারনেট ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত তার এসব বক্তব্য সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ঘটনার মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার ভোররাতে আলোচিত শিশু বক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার বাড়ি থেকে আটক করে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। ওই দিন রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় তাকে হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বৃহষ্পতিবার একটি মামলা দায়ের করা হয়। তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে বৃহস্পতিবার গাজীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম এর আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ প্রদান করলে গাজীপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। সেখানে দুই দিন থাকার পর শনিবার তাকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ তে স্থানান্তর করা হয়।