নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়্যাল রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ হওয়া এবং এর পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনায় বিতর্কিত যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কোনো আলোচনায় হয়নি। ফলে সাংগঠনিক দায়মুক্তি পেয়ে মামুনুল হক হেফাজতে বহাল থাকছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এ নিয়ে হেফাজতের কোনো মাথাব্যথা নেই, আলোচনা নেই। ওনার (মামুনুল হক) বিয়ে শরিয়ত সম্মত ও বৈধ। রোববার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল জামিয়াতুল আহিলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী।

জানা গেছে, সভায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা ৩৫ জন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতা যোগ দেন। সভায় আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ‘সারাদেশে মামলা-হামলা, ধরপাকড়, জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়। আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন হবে। এতে সারাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখরা যোগ দেবেন। সভায় এই কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।’

মামুনুল হকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না? জানতে চাইলে ইসলামাবাদী বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। ওনার বিবাহ শরীয়ত সম্মত ও বৈধ। এটা ওনার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা নিয়ে হেফাজতের কোনো মাথাব্যথা নেই, আলোচনাও নেই।’ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর শেখ সালাহউদ্দিন নানুপুরী বলেন, ‘সভায় শুধু ২৯ মে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

এদিকে সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল হক বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আজকের সভায় কোনো ব্যক্তিবিশেষ নিয়ে আলোচনা হয়নি। কাউকে অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়নি।’

প্রসঙ্গত, মামুনুল হককে নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই হেফাজতে ইসলাম তাদের দায়িত্বশীলদের সভা আহ্বান করায় মামুনুলকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতে ইসলামে একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘মামুনুল হকের বিষয়টি আপাতত আলোচনার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাকে নিয়ে যেসব বিতর্ক সেগুলো আমলে নেওয়া হবে না। তিনি স্বপদে বহাল থাকবেন।’ মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিবের পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্বরত আছেন।

গত শনিবার (৩ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের একটি রিসোর্টে কথিত স্ত্রীসহ মামুনুল হক অবরুদ্ধ হন। গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে, দ্বিতীয় স্ত্রীর পরিচয় গোপন করে প্রথম স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে তিনি ওই রিসোর্টে উঠেছিলেন। এরপর থেকে মামুনুল হকের বিভিন্ন ফেসবুক লাইভের বার্তা, কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নানা বক্তব্য, ফাঁস হওয়া টেলি কথপোকথন নিয়ে সারাদেশে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরই মাঝে মামুনুল হক তৃতীয় বিয়ের দাবি করেছেন। গাজীপুরের কাপাসিয়ার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গেও এক বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে বলে মামুনুল হক ওই নারীর ভাই শাহজাহান সাজুর কাছে দাবি করেন।