শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সাবেক আইনমন্ত্রী, কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাদ আসর পঞ্চম ও শেষ জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিন খসরু করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৬ মার্চ থেকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি। বুধবার বিকেল ৪টা ৫০মিনিটে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ ও আইনজ্ঞের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া কুমিল্লার রাজনীতিবিদদের মধ্যে শোক প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সহ-সভাপতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো.তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার প্রমুখ।

পরিবার ও দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর ঢাকার বাসভবনের পাশে বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ, সুপ্রিম কোর্ট বার ও তার সতীর্থরা শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় খসরুকে স্মরণ করেন। ঢাকায় এ দু’টি জানাজা শেষে মতিন খসরুর মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা-৫ আসনে (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)।

এদিন বাদ জোহর বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার নামাজের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, কুমিল্ল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহীনুল ইসলাম শাহিন, সাবেক জেলা পিপি মোস্তাফিজুর রহমান লিটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেম খান, সাধারণ সম্পাদ আখলাক হায়দার প্রমুখ।

বক্তব্যে তারা বলেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর বিদায়ে বাংলাদেশ ও কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গণে যে শূণ্যতা তৈরি করেছে তা পূরণ হবার নয়। তিনি কুমিল্লার রাজনীতিতে সৎ এবং স্বচ্ছ ভূমিকা পালন করেছেন। বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্যও তিনি একজন আদর্শবান মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আলোচনা ও জানাজার নামাজ শেষে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা মতিন খসরুর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ বাড়ি ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। সেখানে বিকেল চারটায় ভগবান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ আবদুল মতিন খসরুর নিজ গ্রাম উপজেলার মীরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হয় শেষ (পঞ্চম) জানাজা। পরে সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদকে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

মতিন খসরুর বর্ণাঢ্য জীবন

আবদুল মতিন খসরু ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ সালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাজী মো. আবদুল মালেক ও মাতা জাহানারা বেগম। তিনি চার ভাই তিন বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কর্মরত আছেন, ছেলে আর্কিটেক্ট পেশায় নিয়োজিত।

আবদুল মতিন খসরু মাধবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক করেন। কুমিল্লা ল‘ কলেজ থেকে এল এল বি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজকোর্টে যোগ দান করেন। ১৯৮২ সালের ১৩ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১০ সালের ২৪ আগস্ট তিনি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে কুমিল্লা-৫ আসন (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। পরে ১৯৯১ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুমিল্লা-৫ আসন (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তারপর ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আইনমন্ত্রী থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন, যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ খোলে। শুধু রাজনীতিতে নয়, আইন এবং সামাজিক অঙ্গনেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।