প্রায় ৩০ ঘণ্টা পরে অবশেষে নিভেছে সুন্দরবনের আগুন। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, সিপিজি সদস্য ও স্থানীয়দের সম্মিলিত চেষ্টা আর বৃষ্টির পানির বদৌলতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যেই আগুনে পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকার অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। তবে পুড়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুন নেভানো অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এ দিকে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, সবার প্রচেষ্টায় দাসের ভারানি এলাকায় দৃশ্যমান সব আগুন আমরা নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর কোথাও আগুন নেই। তবে ওই জায়গাটিতে শুকনো পাতার অনেক পুরু স্তূপ রয়েছে। যার ফলে কোথাও সুপ্ত আগুন থাকতে পারে। যেহেতু দৃশ্যমান কোনো আগুন নেই তাই আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। এরপরেও কোথাও যদি আগুন দেখা যায় সে ক্ষেত্রে বন বিভাগ আমাদের জানালে আমরা আগামীকাল আবারও পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করব। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে গোলাম সরোয়ার বলেন, আগুনে দাসের ভারানি এলাকার অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। ছোট গাছ, লতাপাতাসহ বেশকিছু বড় গাছ পুড়ে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এরপরেও কোথা কোনো সুপ্ত আগুন থাকলে সেগুলো নেভানো হবে। প্রয়োজনে আবারও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। অগ্নিকা- সংঘটিত এলাকায় বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে।

বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যদি অগ্নিকা- মানবসৃষ্ট পাওয়া যায় তা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে দাসের ভারানি এলাকায় সোমবার দুপুরের দিকে এ আগুন লাগে। ৩০ ঘণ্টার এই অগ্নিকা-ে বনের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেনি বন বিভাগ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, আগুনে অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। যদিও পুড়ে যাওয়া বনভূমির পরিমাণ আরও বেশি বলে মনে করেছে স্থানীয়রা।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্চের ধানসাগর স্টেশনের টহল ফাঁড়ি এলাকায় অগ্নিকা-ে ৩ শতাংশ বনভূমি পুড়ে যায়। এই নিয়ে গত ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার অগ্নিকা- ঘটে। সুন্দরবনে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষোভ ও হাতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় কাইয়ুম, ফজলু, সাকিবুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, সোমবার আগুনের ধোঁয়া দেখেই আমরা বন বিভাগকে খবর দেই। পরে বন বিভাগের কর্মকর্তারা আসলে তাদের সঙ্গে আমরা বনের মধ্যে প্রবেশ করি। লোকালয় থেকে অনেক দূরে গহিন বনে অগ্নিকা- সংঘটিত হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে আমাদের দেরি হয়েছে। বনরক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে আমরাও আগুনের চারপাশে ফায়ার বেজ কাটার কাজ করেছি। দুই দিনে অক্লান্ত পরিশ্রমে মঙ্গলবার সুন্দরবনের আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু এই সময়ে সুন্দরবনের অন্তত ৫ একর বনভূমি পুড়ে গেছে বলে দাবি করেন তারা।

বন বিভাগের সহয়তাকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্য মো. ফিরোজ ও সগির হোসেন বলেন, আগুনের খবর পেয়ে আমরা বন বিভাগের সঙ্গে এসে গাছের ডাল কেটে, ফায়ার সার্ভিসের মালামাল বহন করে এবং ফায়ার বেজ কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছি।

বন সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের মো. আফজাল হাওলাদার বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মতো। সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে। সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু সুন্দরবনের ওপর একের পর এক যে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে আমাদের দারুণভাবে ব্যথিত করছে। এসব আগুনে শুধু সুন্দরবনের গাছই পুড়ে ছাই হয় না, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীও হুমকির মধ্যে পড়ে। বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও এর কারণও সাধারণ মানুষকে জানানো হয় না। সুন্দরবন রক্ষায় আগুনের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দাবি জানান তারা।

এ দিকে সুন্দরবনে অগ্নিকা-ের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি জানতে শরণখোলা রেঞ্জের (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- চাঁদপাই রেঞ্জের (এসিএফ) মো. এনামুল হক ও ধান সাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. ফরিদুল ইসলাম। তিন সদস্যের ওই কমিটিকে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।