ক্যুর মাধ্যমে দখলকৃত বারিধারা মাদ্রাসার মুহতামিম ও হেফাজতে ইসলামের সাবেক অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাসেমীর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ, অর্থলিপ্সা এবং জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে গভীর সংকটে হেফাজতে ইসলাম। এই দুই কুচক্রী দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে গোপন আঁতাতের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে একদিকে যেমন অঢেল অর্থ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করেছেন নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের ঢাল হিসেবে।

বারিধারা মাদ্রাসা দখল নিতে ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম মাওলানা নাজমুল হাসানকে মাদ্রাসায় না আসার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করেছে অথচ মাওলানা নাজমুল হাসানকে নুর হোসেন কাসেমী জীবদ্দশায় ভারপ্রাপ্ত মোহতামিম হিসেবে অসিয়ত করে যান। সরকারবিরোধীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য বারিধারা মাদ্রাসায় ক্যু করে মাদ্রাসা দখলে নিয়ে ভবিষ্যতে হেফাজতে ইসলাম ও সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই মুফতি মুনীর হোসেন ও তার সহযোগীদের মূল লক্ষ্য।

মনির কাসেমী বারিধারা মাদ্রাসার গরীব, অসহায় ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য এবং গুলশান, বনানী, বারিধারার ধনাঢ্য ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ চাঁদা আদায় করেছেন। অথচ এ টাকার সিকিভাগও মাদ্রাসা ছাত্রদের পিছনে ব্যয় না করে ঢাকার অভিজাতপাড়ায় বাড়ি নির্মাণ করে আয়েশি জীবন যাপনে ব্যায় করেছেন। তিনি অতীতেও এ ধরনের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে গাজীপুরের শ্রীপুর মাদ্রাসায় চাকরিকালীন প্রায় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে।

তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর কাছ থেকে অর্থলিপ্সার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের পরে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পরে তাদের সাহায্যার্থে বিশে^র অনেক দেশের দাতা সংস্থায়ই তাদের অর্থ সাহায্য করে। মুনির হোসেন কাসেমী এ চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের পিছনে ব্যয় না করে নিজেই আত্মসাৎ করে। এছাড়াও হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাঙ্গালীসহ বিদেশীদের অনুদানকৃত অর্থও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বারিধারা মাদ্রাসা দখল, মাদ্রাসা ছাত্রদের নামে টাকা আদায়, রোহিঙ্গাদের নামে আসা অর্থ সাহায্য, হেফাজতের নামে আদায়কৃত টাকা যার সবকিছুই মনির কাসেমী তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চভিলাষ বাস্তবায়নে ব্যয় করে আসছিলেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার সংসদীয় আসন নারায়ণগঞ্জ-০৪ থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রার্থী হিসেবে এ টাকার একটি বড় অংশ খরচ করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকী একচ্ছত্রভাবে হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। ইনামের কূটকৌশলের কাছে জিম্মি হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী। বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মসহ রাতারাতি বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে ইনাম।

হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মূলত ইনামুল হাসান ফারুকী। বিভিন্ন উপায়ে ছাত্রদের উত্তেজিত করে বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে আন্দোলন গড়ে তোলে ইনাম। মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার, দলাদলি ইত্যাদি কারণে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিভিন্ন গ্রুপে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা যেনো তার নিত্য নৈমিত্তিক কাজ। এ কাজে সে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে বাবুনগরীকে কব্জা করা। বাবুনগরীর চারপাশে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরীর মাধ্যমে নিজেই সর্বেসর্বা হয়ে উঠেছে। যার কারণে অন্য কোনো খাদেম কিংবা শুভাকাঙ্খি বাবুনগরীর ধারেকাছেও ঘেষতে পারছে না। খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকীর এহেন কর্মকান্ডে হাটহাজারীর মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষকসহ ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরী হলেও ইনাম তাকে কৌশলে হেফাজতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করছে। অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ নিয়ে হেফাজতের পদ পাইয়ে দেওয়াসহ নিজে হাটহাজারীর বাসিন্দা না হয়েও হাটহাজারী পৌরসভা হেফাজতে ইসলামের সহকারী প্রচার সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেন। খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকীর এহেন কর্মকান্ডে হেফাজত ইসলামের গ্রেফতারকৃত নেতৃবৃন্দসহ ইসলামী অঙ্গনে ক্ষোভ রয়েছে। হেফাজতের বিস্তৃতি দেশব্যাপী হলেও এর নেতৃবৃন্দ কেউ সরাসরি বাবুনগরীর সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে না যা নিয়ে হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিরক্ত ও বাবুনগরীকে দোষারোপ করছে। ফলে বাবুনগরীর ইমেজ দিন দিন চরম সংকটের মধ্যে পতিত হচ্ছে।

নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইনামুল হাসান ফারুকী যার বাবার বিরুদ্ধে রয়েছে চেক জালিয়াতির অভিযোগ। অথচ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার সর্বেসর্বা হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে তার নিজ বাড়িতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। বিভিন্ন উৎস থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বাবুনগরীর নাম ভাঙিয়ে ইনাম নগদ অর্থ, তার বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে। ইনাম তার ব্যক্তিগত ও আত্মীয়-স্বজনদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দিতে বাবুনগরীকে দিয়ে বিভিন্ন মহলে তদবির করিয়ে থাকে। এছাড়াও অতিসম্প্রতি খাদেম ইনাম ঘটা করে তার বিয়ের উৎসব পালন করে। বিয়েতে দুটি হেলিকপ্টারযোগে অতিথি আনাসহ জৌলসপূর্ণ অনুষ্ঠান পালনের জন্য খরচ করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। কুয়েত প্রবাসী কনেকে বিয়ে করার একটি উদ্দেশ্য যেমন কনের বাবার অর্থ সম্পদ করায়ত্ব করা অন্যদিকে বাংলাদেশী টাকা কুয়েতে পাচার করা।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কোথায় কোন মাহফিলে অতিথি হয়ে যাবেন তা নির্ভর করে খাদেম ইনামের উপর। অনেক ক্ষেত্রে বাবুনগরীর শরীর খারাপ থাকলেও প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাড়ী কিংবা হেলিকপ্টারযোগে টেনে নিয়ে বাবুনগরীকে বিতর্কিত করছে এবং শারীরিকভাবেও তাকে অসুস্থ করছে। আমন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বাবুনগরীর অনুষ্ঠান নির্ধারণ করে অথচ বাবুনগরী নিজেই জানেন না তিনি কখন কোন অনুষ্ঠানে যাবেন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় বাবুনগরীর অনুরক্ত ব্যক্তিরা তার জন্য উপহার ও হাদিয়া নিয়ে আসলে এর বড় একটা অংশ চলে যায় ইনামের পকেটে।

খাদেম ইনামুল হাসান ফারুকীর টাকার লোভ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো বাছ বিচার ছাড়াই সরকার বিরোধী লোকদের কাছেও সে হরহামেশা টাকা নিচ্ছে। কথিত আছে যে, বারিধারা মাদ্রাসা দখলকারী মনির হোসেন কাসেমী বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা নিয়ে ইনামের সাথে ভাগাভাগি করছেন। মনির হোসেন কাসেমী ইনামের বিয়েতেও বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করেছেন। মনির হোসেন কাসেমী কর্তৃক ইনামকে হাত করার মূল লক্ষ্য হচ্ছে হেফাজতে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং নিজ স্বার্থে হেফাজতকে ব্যবহার করা।

ঐতিহাসিকভাবে খাদেমদের নিয়ে ক্বওমী অঙ্গনে নানা ধরনের বিশ্বাসঘাতকতার গল্প প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া, মনির কাসেমীর মতো ধুরন্ধর ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী লোকেরা হেফাজতের আজকের এই দুরবস্থার জন্য দায়ী। এতকিছুর পরেও জুনায়েদ বাবুনগরী উদাসীন থাকলে হেফাজত ও হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ সমস্ত ক্বওমী অঙ্গন আবারও গভীর সংকটে পতিত হতে পারে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন।