বাংলাদেশ লোকাল গাইড গুগল অনুমোদিত ম্যাপ ভিত্তিক একটি ভলান্টিয়ার কমিউনিটি।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই কমিউনিটির চ্যাপ্টার রয়েছে। বাংলাদেশে এর চ্যাপ্টার এর নাম বাংলাদেশ লোকালগাইড।

মূলত এ কমিউনিটির সদস্যরা গুগল ম্যাপে নির্ভুলভাবে বিভিন্ন রাস্তা, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা যুক্তকরণ ও অন্যান্য তথ্য হালনাগাদ এবং ম্যাপে ভুল তথ্য সংশোধন করে থাকে। কখন কী খোলা থাকবে বা বন্ধ থাকবে, সময়সূচি, ওয়েবসাইট লিংক, ফোন নম্বর, ছবি যুক্ত করা, সার্ভিস গ্রহণ এরপর রিভিউ দিয়ে থাকে জায়গাটা কেমন তা তুলে ধরা, হুইল চেয়ার প্রবেশ করে কিনা, কিডস ফ্রেন্ডলি কিনা, পার্কিং ব্যবস্থা আছে কি নেই, করোনা মহামারি চলাকালীন কোনো প্রতিষ্ঠান মাস্কসহ প্রবেশ নিয়ে যাচাই করে কিনা এবং অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকে যা অন্য কোনো ম্যাপ ব্যবহারকারীকে সহজেই তার তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। মূলত গুগল ম্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও সাবলীল এবং ম্যাপের উপযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ভলান্টিয়াররা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করে থাকেন।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এ কমিউনিটির বর্তমানে সারা দেশজুড়ে ৬ হাজারের অধিক সদস্য রয়েছে, যারা একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ম্যাপকে তথ্যবহুল, নির্ভুল এবং সঠিক করার জন্য। বাংলাদেশ লোকাল গাইড ম্যাপভিত্তিক কার্যক্রম ছাড়াও এ কমিউনিটি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক এবং দেশীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে কাজ করে থাকে। গত ১১ জুন হয়ে গেল বাংলাদেশ লোকাল গাইডের ৭ম বর্ষপূর্তি ও ১৬১তম মিটআপ অনুষ্ঠান,যা আয়োজিত হয় ঢাকার অদূরে মাওয়ায় সদ্য চালু হওয়া এবং বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রেস্টুরেন্ট “প্রজেক্টহিলসায়”।

এবারের আয়োজনে সারা বাংলাদেশ থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ার বাছাই করে ১২০ জন লোকাল গাইডকে নির্বাচিত করে আমন্ত্রণ জানানো হয় ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য। সাধারণত বর্ষপূর্তির আয়োজন সাজানো হয়ে থাকে সমসাময়িক কোন জনসচেতনামূলক বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি সুনির্দিষ্ট থিম এর উপর।

এই আয়োজনের প্রধান উদ্যেশ ছিল, ভলান্টিয়ারদের উক্ত থিম এর উপর সম্মুকধারনা ও জ্ঞানঅর্জনের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে করে তারা জনসচেতনায় ভুমিকা রাখতে পারে। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি ও এর সাশ্রয়ী করার সুযোগ’।

নবায়ন যোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে কাজকরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানী সোলারল্যান্ড বাংলাদেশ লিমিটেড এর প্রতিনিধি ইন্জিনিয়ার জনাব আব্দুল গাফ্ফার সবার সামনে বাংলাদেশপ্রেক্ষিতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের খাতসমূ্হ, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ থেকে আয়ের উপায় এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবার বিভিন্ন কলাকৌশল সংক্রান্ত একটি তথ্যবহুল প্রেসেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

৭ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিলেন লোকাল গাইড সিরাজুল আজাদ। তিনি গুগল ম্যাপে বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্য নির্ভরযোগ্য ও আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সব লোকাল গাইড সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও তুলে ধরেন গুগল লোকাল গাইডের ধারাবাহিক কার্যক্রমগুলো।অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন লোকালগাইড এর অন্যতম সদস্য জহিরুল ইসলাম।

এছাড়া  কমিউনিটি মোডারেটর মাহাবুব হাসান গুগল ম্যাপ কমিউনিটির নানা কলাকৌশলের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, মাহাবুব হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লোকাল গাইড গুগল হতে বিশ্বের সেরা লোকাল গাইড কমিউনিটির পুরষ্কার অর্জন করে। তার অসামান্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে একমাত্র বাংলাদেশি হিসাবে তাকে গুগল লোকাল গাইড কানেক্টস ‘গাইডিং স্টার’ খেতাবে ভূষিত করে।

প্রজেক্ট হিলসার ডিরেক্টর জনাব তসলিম আহমেদ সকলের সামনে তুলে ধরেন প্রজেক্ট হিলসা প্রতিষ্ঠার বিস্তারিত দিক, রেস্টুরেন্ট এর বিভিন্ন ইউনিক বৈশিষ্ঠসমুহ এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে কিভাবে ডেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যবস্হা করেছেন এবং এই সিস্টেম ব্যবহার করে প্রাকৃতিক আলোতে তাদের প্রতিষ্ঠানে সারাদিন আলোর স্বল্পতা দূর হয়।প্রজেক্ট হিলসার সিইও জনাব সুকান্ত রেস্টুরেন্ট এর খাবারের বৈচিত্রতা ও মান নিয়ে কথা বলেন।

বাংলাদেশ লোকাল গাইড এর মেম্বারদের উৎসাহ জোগাতে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন ওমেরাসোলার এর সিইও জনাব মাসুদুর রহিম এবং এক্সস্যাক্স এর জেনারেল সেক্রেটারি জনাব জুনায়েদ কাদের রুশ। তারা বাংলাদেশ লোকালগাইড যে কোনো প্রয়োজনে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। বেলা শেষে অত্যন্ত আনন্দ ঘন ও উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে বাংলাদেশ লোকাল গাইড এর মিলনমেলার এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।