আমার দোয়া আশা আমার অভাগা নিষ্পাপ সন্তান ভালো আছে নিশ্চয় ওপারে- সে ভারি মিষ্টি ভারি আদরের, নিষ্পাপ, পবিত্র ! তাকে নিয়ে এভাবে লিখব, বা তাকে এইভাবে হারাতে হবে ভাবিনি, শূয়র- হায়না শকুন ঘাতকেরা এইভাবে নিষ্পাপ শিশুকে তাদের চাকায় পীচের রাস্তায় পিষে বর্বর নির্মম ভাবে খুন করবে , সবই যেন স্বপ্ন, হয়ত আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে আমি আবার আমার নিষ্পাপ সেই পবিত্র মিষ্টি মুখটি দেখব। কেন জানি প্রতিক্ষণ প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, ইস সে যদি আমার সামনে এসে আমাকে আব্বু বলে বুকে জড়িয়ে ধরে, বুকের ভিতরের তীব্র যন্ত্রণার ঢেউ হয়ত একটু শান্ত হত, সড়কে ঘাতকের হাতে প্রান হারিয়ে আমার মত কত মা-বাবা আদরের সন্তান হারিয়ে চোখে মুখে কান্নার রোল, আমার কান্নায় যেন শরীরের সকল রক্ত অশ্রু হয়ে বের হয়ে আসতে চায়, কারন কষ্টে চোখের সকল জল আগেই শুকিয়ে গেছে । তবুও স্বান্তনার জন্যই বেদনা ভুলে থাকার জন্য, কষ্ট গুলোকে চেপে রেখে বিভিন্ন জায়গায় লিখি, কেউ আমার ফরিয়াদ শুনে না, মানুষের এত্ত সময় কৈ এইসব লেখা পড়ার , মানুষের এত্ত সময় কথায় অন্নের কষ্টে সমবেথি হবার,

কি অপরাধ করেছিল আমার নিষ্পাপ সন্তান? যার মিষ্টি পবিত্র আদরের মুখ দেখলে মিষ্টি হাসিতে মনের সকল কষ্ট বিলিন হয়ে যায়, আমি আমার হীরের টুকরো দুই সন্তান নিয়ে সুখেই ছিলাম, প্রতি রাতে শুতে গিয়ে আমি শোকর-আলহামদিলিল্লাহ বলে শুতে যেতাম, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান আমার গর্ব , শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গর্ব , এলাকার গর্ব, আমার দুই সন্তান আমার ভালোবাসা , আমার কাছে আল্লাহর রহমত, আল্লাহার অশেষ মেহেরবানীতে আমার দুই সন্তান মেধাবী ও ইনডোর আউটডোর খেলাধুলা, কালচারাল প্রোগ্রাম, সায়েঞ্চ ফেয়ার সব দিক থেকে সম ভাবেপারদর্শী, আমার সন্তান শুধু আমার নয় দেশেরও গরব, আমার জ্যেষ্ঠ ছেলে আদনান সামিন বারিধারা স্কলার্স থেকে পিএসসি ও জেএসসি তে জিপিএ-৫ পায়, ২০১৭ সালে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে, নটারডেম কলেজে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স ২য় বর্ষের ছাত্র এবং কনিষ্ঠ ছেলে আদনান তাসিন,বারিধারা স্কলার্স থেকে পিএসসি ও জেএসসি তে জিপিএ-৫ পায়, ২০১৮ সালে ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করে, সেন্ট যোসেফ এ একদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। আমার দুই সন্তানের জন্য কখনো প্রাইভেট টিচার এর প্রয়োজন হয়নি, তার মা’ই ছিল তাদের আদর্শ, তাদের টিচার, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনেকেই বলতো একই দুই ভাই মেধাবী, তারা নিয়ম মাফিক লেখাপড়া , কোরআন তেলওয়াত, নামাজ পড়তো, তাদের দুই ভাই ছিল পরম বন্ধুর মত, তারা সব বিষয়ে আমাদের সাথে শেয়ার করতো, সদা উৎফুল্ল – হাসি খুশি থাকতো দুই ভাই, কোন বিষয়ে তাদের কোনদিন কোন আবদার অভিযোগ ছিলনা, সব টাতে সন্তোষ থাকতো দুই ভাই,

২০১৭ সালে হটাত করে আমি জিবিএস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সম্পুরন শরীর পারালাসেস হয়ে যায়, আমি শয্যাশায়ী, ডাক্তার , ঔষধ , ফিজিও, তার পরও মনোবল ভাঙ্গে নি, দুই সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে দাড়াঁতে শিখেছি, দুই সন্তানের উপর ভর করে হাটঁতে শিখছি, দুই সন্তানের উপর ভর দিয়ে নতুন করে বাঁচতে শিখছিলাম, বাবার হাত ধরে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য অনেক সন্তানের হয় – কিন্তু সন্তানের হাত ধরে দাঁড়ানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু হায়না শকুন ঘাতক আমার আদরের নিস্পাপ ছোট্টো সন্তানকে নির্মম ভাবে খুন করে, যে সন্তান মানুষকে বাঁচতে শেখায়- সে নিজেই পৃথিবীতে থাকতে পারলো না আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার

মেধাবী শিক্ষার্থী আদনান তাসিন সেন্ট যোসেফ কলেজের ইংলিশ ভার্সন সায়েন্স এর প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল, গত ১১ই ফেব্রুয়ারিতে কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে বিমান বন্দর সড়কে শেওড়া বাস ষ্টেন্ডে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হবার সময়ে দুরপাল্লার দ্রুত গামী ভ্রাম্মনবাড়িয়ার বাস তাকে শিক্ষার্থীর পোশাকে দেখে ক্রোধের বশবর্তী হয়ে – ইচ্ছাকৃত ভাবে চাপা দিয়ে চলে যায়,

আমার কলিজার টুকরো নির্মম ভাবে খুন হবার পর এখনো পর্যন্ত নিত্যরাতে তার নিষ্পাপ আদুরী মধুমাখা বার বার চোখে ভেসে উঠে, ইছা হয় এখনি তাকে বুকে নিয়ে ঘুমাই। আর তার গর্ভ ধারিণী মা বার বার আঁচল দিয়ে চোখ মুছে- কোরআন তেলওয়াত নামাজ পড়ে নিষ্পাপ সন্তানের জন্য প্রাথনা করে – নিজেকে নিজে সান্তনা দিতে চেষ্টা করে, বড় ছেলেকে সান্তনা দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু কষ্টের কান্না কিছুতেই থামানো যায়না। পরিশেষে আদরের নিষ্পাপ সন্তানের জন্য সকলের কাছ থেকে দোয়া কামনা করছি।

আমি এক বাবা, যে হায়না, জানোয়ার, শকুন, ঘাতকদের হাত থেকে প্রান প্রিয় সন্তানকে বাঁচাতে পারিনি, সামান্যতম চিকিৎসা দিতে পারিনি হাসপাতাল নামের পশুশালার পশুদের অবজ্ঞার কারনে, এখন তার হত্যা কারী হায়নাদের ধরাও হয়নি, হয়তো বিচারো হবেনা, তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার সহপাঠী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যার যার ধান্দায় ব্যাস্ত , এক মূহুর্ত্তের জন্যে তার কষ্টকর মৃত্যুর কথা কেউ ভাবলো না, সহানুভূতি দেখালো না, বিচার চাইলো না, প্রতিবাদ করলো না, তাদের কলেজ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক নূন্যতম ফোনকরেও সহানুভূতি জানালোনা-হত্যার বিচার দাবি করলোনা, তার নির্মম হত্যাকাণ্ডে তাদের ……..

আমি বাবা দিবসে বাবা হিসাবে পৃথিবীর সকল সন্তানের কাছে আবেদন, আমার সন্তানের হত্যার বিচারের দাবিতে গণ জাগরণ সৃষ্টি করে , ঘাতকদের মৃত্যু দণ্ড দিবার দাবীতে ঐক্য গড়ুন ! যাতে ঘাতকরা আর কোন সন্তানকে কেড়ে নিতে সাহস না পায় , তাদের বিস দাঁত ভেঙে দিতে হবে!!

আজ বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল সন্তানদের জন্য রইল আমার আদর আর ভালোবাসা !! সুস্থ থাকুক সকল সন্তানরা, আর বাবা পরপারে চলে গেছেন তাদের জন্য দোয়া – করি আল্লাহ তাদের জান্নাত বাসী করেন!!
আমার প্রাচুর্যতা, ধন সম্পদ নেই, বড় অট্টালিকা নেই, তার পরো আমি পৃথিবীর সেরা সুখী দের একজন কারন আমার হিরের টুকরো সন্তান!! কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলনা – আমার নিষ্পাপ পবিত্র ভারি মিষ্টি আদরের ছোটো সন্তান #আদনান_তাসিন কে কেড়ে নিয়ে গেছে হায়না, শূয়র, নেকড়ে ঘাতকরা, আমি ঘাতকদের বিচার চাই !!

আহসান উল্লাহ টুটুল