কয়েকদিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় হঠাৎ করে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তাপাড়ের মানুষের ফসল নষ্ট হওয়াসহ ঘরবাড়ি পানিবন্দী হওয়ার চিত্র দেখা গেছে। এ দিকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হবার ভয়ে তিস্তাপাড়ের মানুষেরা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে বাড়ি সরানোর কাজ করছেন।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা আবারও যৌবন ফিরে পেয়েছে। অপরদিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী জেলার ৫টি উপজেলার অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী এবং সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষেরা বেশি পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে কতগুলো পরিবার পানিবন্দী তা এখনো জানা যায়নি।

এ দিকে হঠাৎ তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে তিস্তাপাড়ের মানুষ বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করলেও বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তায় বড় ধরনের বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

তবে হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। অনেকের ফসল ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

চরাঞ্চলের শুকুর আলী জানান, রাতে হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাবে ভাবতে পারিনি। রাতে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না। পানি উন্নয়নের লোকজন আগে কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি যে বাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে আছি।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ফেরদৌস আলম বলেন, প্রতিবছর হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলাগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে। পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা করতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে বলা হয়েছে। তালিকা পেলে বরাদ্দ নিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষদের খবর নিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বলা হয়েছে। তবে পানি শিগগির কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।