পহেলা জুলাই ২০২১ হতে দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে ।এর আগে জেলাভিত্তিক লকডাউন ছিল। আমরা বেশকিছু জেলার মানুষ এক নাগাড়ে প্রায় ২৪ দিন লকডাউনের কোর্স পূর্ণ করেছি। কিন্তু করোনার আক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই, কমছে না । আজ থেকে ২৪ দিন আগে যখন লকডাউন শুরু হয় ,তখন প্রতিদিন সারা দেশে মারা যেত ৫০/৬০ জন। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০এর উপরে। সরকার সমর্থক লোকজন বলছে “লোকজন ঠিকমতো লকডাউন পালন না করার কারণে করোনার সংক্রামন বাড়ছে।” সরকার বিরোধীরা বলছেন “এই লকডাউনে গরিব মানুষ মরবে, করোনা কমবে না। ” তাই আমাদের এখন লকডাউন এর বিকল্প ভাবতে, হবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরতে হবে ,হেলমেট মাস্ক পরতে হবে, হাতমোজা পরতে হবে ,হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে, অপ্রয়োজনে বাইরে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে,প্রচারমাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

লোকজন বিশেষ করে যারা যারা দিনমজুর তারা লকডাউন মানছে না। প্রতিনিয়ত পুলিশের সাথে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ছে।
১৯৮৮ সালের কথা। আমার শ্রদ্ধেয় মায়ের যক্ষা ধরা পড়েছিল। যক্ষা একটি ছোঁয়াচে রোগ। চিকিৎসকেরা এসে আমার মাকে আইসোলেশনে থাকতো বলেছিলেন। মায়ের একটি স্বতন্ত্র কক্ষে ঘটি, বাটি ,প্লেট ,চামচ ,কাঁথা ,বালিশ আলাদা করে দেন। সে সময় যক্ষা রোগের চিকিৎসা ছিল খুবই কষ্টদায়ক। মাকে ১৮ মাসের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়েছিল। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী প্রতিদিন দুইবেলা মাংসে ইনজেকশন দেওয়া হতো । মা খুব কষ্ট পেতেন। ৬ মাস ইনজেকশন নেওয়ার পর মা কিছু টা ভাল হন।মা তখন বললেন – আমি আর ইঞ্জেকশন নেবো না। এত কষ্টের চেয়ে মারা যাই তাও ভাল। যেমন কথা তেমন কাজ ।২০০১ সালে আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
লকডাউন যদি ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হয় তাহলে লোকজন হয়তো একসময় বলবে লকডাউনের কষ্টের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ই ভাল।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে শারীরিক রোগের চিকিৎসা করা সুন্নত। তবে তার আগে অনেকগুলো কাজ করতে হবে। যেমন
১. তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে ।
২. আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করতে হবে ।
৩. ইস্তেগফার করতে হবে ।
৪. দোয়া করতে হবে ।
৫. রোগীকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

রোগ হওয়ার আগে প্রতিরোধক ব্যবস্থা -যেমন মাস্ক পরা ,টিকা নেওয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ,লকডাউন পালন করা এ সকল কাজ মুবাহ। তকদিরে বিশ্বাস করা ফরযে আইন।
মৃত্যু সম্পর্কে আল্লাহপাক কুরআনুল কারীমে বলেন —( যার অর্থ)
১!” যে মৃত্যুর ভয় তোমরা পালাচ্ছো সে তোমাদের সাথে আলিঙ্গন করবেই। ” সূরা জুমা আয়াত ৮

২! “তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত তোমাদের পাবেই ।যদিও তোমরা সুরক্ষিত প্রাচীর দুর্গের মধ্যে থাকো । ” সূরা নিসা আয়াত ৭৮

৩!” আল্লাহর হুকুম ছাড়া তোমাদের উপর কোন বিপদ পতিত হয় না ।” সূরা তাগাবুন আয়াত১১

৪!” পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে কোন বিপর্যয় নেমে আসে আমি তা সংগঠিত করার পূর্বেই লিপিবদ্ধ করে রাখি।” সূরা হাদীদ আয়াত ১১।

৫! “প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। ” সুরা ইমরান আয়াত ১৮৫

তাই গরিব মানুষের কষ্ট ও আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে লকডাউন দিতে হবে ।পাশাপাশি লকডাউন এর বিকল্প কোনো চিকিৎসা থাকলে সে ব্যবস্থাপত্র দিতে হবে ।ইংরেজীতে একটা কথা আছে every action has equal and opposite reaction.
(প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।) আমরা শিক্ষক সমাজ যারা দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বন্দি আছি তারা নানা রকম শারীরিক ও মানসিকভাবে সমস্যায় ভুগছি। যেমন ডায়াবেটিস , স্থূলতা, ওজন বৃদ্ধি,উচচ রক্তচাপ, বিষন্নতা প্রভূতি জটিল সমস্যায় ভগছি। শিক্ষার্থীরাও অনুরূপ সমস্যায় ভুগছে।
পরিবহন শ্রমিক, দোকানদার ,ব্যবসায়ী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের প্রতি বিবেচনা করে লকডাউন এর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।

লেখক
মোহাম্মদ আলী শেখ
সহকারী অধ্যাপক
কাদিরদী ডিগ্রি কলেজ
বোয়ালমারী ফরিদপুর