গাজীপুরে টাকা না দেওয়ায় এক ভবনের মালিককে গলা কেটে খুন করে টয়লেটে লুকিয়ে রেখেছে এক যুবক। পরে নিহতের অর্ধগলিত লাশ পুলিশ সেখান থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ঘাতক যুবকটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ক্লুলেস খুনের এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। শনিবার জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মোঃ জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতের নাম- জাহাঙ্গীর আলম সোহাগ (৩৮)। সে নীলফামারী জেলা সদর থানাধীন পূর্ব কুখাপাড়া এলাকার মোঃ নজরুল হোসেনের ছেলে। সে গাজীপুরের দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার পদ্মা হাউজিং এলাকার ভাড়া বাসায় থাকে।

জিএমপি’র উপ-কমিশনার মোঃ জাকির হাসান জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানাধীন দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার পদ্মা হাউজিংয়ে জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন আমিনুল ইসলাম খন্দকার ওরফে বাবুল (৬০)। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানাধীন বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মফিজুল ইসলাম খন্দকারের ছেলে। ইতোমধ্যে ভবনের দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (১৫ জুলাই) বিকেলে ভবনে ভাড়াটিয়ারা পঁচা দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তৃতীয় তলার একটি টয়লেটের ভিতর বাবুলের গলা কাটা লাশ দেখতে পায়। ওই টয়লেটের দরজা বাহির থেকে আটকানো ছিল। তিনি গত কয়েকদিন যাবত নিখোঁজ ছিলেন।খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবুলের গলাকাটা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। ক্লুলেস এ খুনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

তিনি জানান, জিএমপি’র অতিরিক্ত উপ- কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজওয়ান আহমেদের নেতৃত্বে এবং সহকারী কমিশনার (কোনাবাড়ি জোন) সুভাশীষ ধর এর অংশগ্রহণে কাশিমপুর থানা পুলিশের একাধিক টিম কাশিমপুর ও আশুলিয়া থানা এলাকায় বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়েল ইন্টিলিজেন্স এর সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গাজীপুরের দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার পদ্মা হাউজিংয়ের ভাড়া বাসা থেকে জাহাঙ্গীর আলম সোহাগকে শুক্রবার (১৬ জুলাই) সকালে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বাবুলকে খুন করার কথা স্বীকার করে সোহাগ। এসময় তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরির অংশ জব্দ করা হয়। শনিবার গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হয় গ্রেফতারকৃত সোহাগকে। এসময় সে আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেনের কাছে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস আমিনুল ইসলাম খন্দকার ওরফে বাবুল হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলার একটি কক্ষে তিনি একাই বসবাস করতেন বাবুল। গত ১৩ জুলাই রাত ৮টার দিকে সোহাগ ভবনের তৃতীয় তলায় উঠে ভবনের মালিক বাবুলকে মোবাইল ফোন করে। এসময় সোহাগ জানায় ভবনের তৃতীয় তলায় কয়েকজন লোক উঠেছে। এ খবর পেয়ে বাবুল ওই তলায় গিয়ে লোকজনের সন্ধান করতে থাকেন। টয়লেটের ভিতর খোঁজার সময় পেছন থেকে বাবুলের মুখ চেপে ধরে ২০ হাজার টাকা দাবী করে সোহাগ। টাকা দিতে অস্বীকার করলে গার্মেন্টসের কাটিং ছুরি বাবুলের গলায় ধরে ভয় দেখালে দু’জনের মধ্যে ধ্বস্তাধ্বস্তি হয়। ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে বাবুল আত্মরক্ষার্থে সোহাগের আঙ্গুলে কামড় দেন। এসময় ওই কাটার দিয়ে গলা কেটে বাবুলকে খুন করে সোহাগ। পরে নিহতের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ৯৯৭ টাকা নিয়ে লাশ টয়লেটের ভিতরে রেখে দেয়। পরে টয়লেটের দরজা বাহির থেকে আটকিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে সোহাগ।