রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে সমাহিত হলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রখ্যাত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। শনিবার (২৪ জুলাই) দুপুর দুইটার কিছু পরে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সমাহিত করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। এর আগে সকাল ১১টার দিকে খিলগাঁও পল্লীমা সংসদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর বেলা ১২টার দিকে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গণসংগীতশিল্পীর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেখানে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান ফকির আলমগীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে রেখে গেছেন। করোনা আক্রান্ত ছাড়াও ফকির আলমগীরের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল।

ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় দিনটিতে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মো. হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেসা। শিল্পী কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে তিনি তাঁর গান দিয়ে মানুষকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। গণ–অভ্যুথান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের সামরিক শাসনবিরোধী গণ–আন্দোলনে তিনি শামিল হয়েছিলেন তাঁর গান দিয়ে।

সংগীতের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য এ পর্যন্ত পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় ‘একুশে পদক’, ‘শেরেবাংলা পদক’, ‘ভাসানী পদক’, ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড অব অনার’, ‘তর্কবাগীশ স্বর্ণপদক’, ‘জসীমউদ্‌দীন স্বর্ণপদক’, ‘কান্তকবি পদক’, ‘গণনাট্য পুরস্কার’, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক মহাসম্মাননা’, ‘ত্রিপুরা সংস্কৃতি সমন্বয় পুরস্কার’, ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড যুক্তরাষ্ট্র’, ‘জনসংযোগ সমিতি বিশেষ সম্মাননা’, ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড বিশেষ সম্মাননা’ ও ‘বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপ’ তিনি।