রফতানীমুখী কল কারখানা খুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণার পরপরই উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার লাখো মানুষ ছুটে চলেছেন কর্মস্থলের দিকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে যে যেভাবে পারছেন সেভাবেই হন্যে হয়ে ফিরছেন বাড়ি থেকে। ফলে গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে এখন ঢাকামুখী লাখো মানুষের ¯্রােত। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সামাজিক দুরত্বসহ কোন বিধিই মানছেন না তারা।

দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উর্ধ্বগতির কারণে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউনে শিল্পকারখানা বন্ধ ছিল। সরকারের ওই ঘোষণা পরিবর্তন করে ১ আগস্ট (রবিবার) সকাল থেকে রফতানীমুখী কল কারখানাগুলোকে চলমান বিধি নিষেধের বাইরে রাখার প্রজ্ঞাপন গত শুক্রবার জারী করা হয়।

রফতানীমুখী কল কারখানা চালু হওয়ার সিদ্ধান্তের পরপরই গাজীপুর ও ঢাকাসহ আশোপাশের এলাকার শিল্প কারখানাসহ বিভিন্ন অফিসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। এবারের ঈদে তাদের অধিকাংশই স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে বাড়ি গিয়েছেন। ঈদের ছুটি শেষে চলমান লকডাউনের মধ্যে কল কারখানা খোলার খবরে তারা এখন পরিবার নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন। অফিস ও কারখানা চালুর খবরে শুক্রবার রাত থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে ঢাকামুখী মানুষের বাড়তি চাপ বেড়েছে। যে যেভাবে পারছেন ছুটে চলেছেন ঢাকার দিকে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এসব লোকজনকে পায়ে হেঁেট বা অটোরিক্সা, টমটম, ব্যটারিচালিত রিক্সা ও ভ্যানে এবং মালবাহী পিকআপ ও ট্রাকে করে ভেঙে ভেঙে যাত্রীদের নগরীতে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। তবে নিষিদ্ধ যানবাহনেই বেশি আসছেন মানুষ। শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়েছে। গাজীপুর হয়ে ঢাকায় প্রবেশের সবকটি প্রবেশপথে বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মানুষের চাপ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। ওই দু’টি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে গাড়িতে তল্লাশি করছে, অবৈধভাবে যাত্রী বহনের জন্য জরিমানা করছে। তবুও পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, মাওনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, চন্দ্রা, কালিয়াকৈরসহ বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড ও পয়েন্টে বাড়ি থেকে ফিরে আসা ক্লান্ত অনেককে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন নিয়ম কানুন। সপ্তাহের শেষ দিনে গাজীপুর হয়ে ঢাকার সবকটি প্রবেশপথে বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। ওই দু’টি মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে গাড়িতে তল্লাশি করছে, অবৈধভাবে যাত্রী বহনের জন্য জরিমানা করছে। তবুও পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

শনিবার বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ ও শেরপুর থেকে আসা কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে। তারা ঢাকার বিভিন্ন কারখানা ও বেসরকারি অফিসে চাকুরি করেন। তারা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন অফিস আদালত ও মিল কারখানা বন্ধ ছিল। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা কঠোর লকডাউন শুরুর আগে ঈদুল আজহার ছুটি পেয়ে বাড়ি গিয়েছেন। রবিবার থেকে বন্ধ কারখানা ও অফিস খোলা হচ্ছে। তাই কঠোর লকডাউনের মধ্য দিয়েই করোনা সংক্রমণের ঝুকি নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কখনো পায়ে হেটে, আবার কখনো অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিক্সা ভ্যান বা পিকআপে চড়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। আবার অনেকে মালবাহী ট্রাকে ও পিকআপে চড়ে কিংবা মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে গাঁদাগাঁদি করে ফিরছেন। কিন্তু কখন গন্তব্যে পৌছাবো জানিনা। এক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। চাকুরি বাঁচাতে লকডাউনের কারণে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় প্রায় ৫/৬ গুণ অতিরিক্ত ভাড়ার বোঝা আর বিড়ম্বনা মাথায় নিয়ে পরিবার পরিজন ও গাট্টি বোচকা নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হয়েছে। একদিকে চলছে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন, আবার অন্যদিকে চালু হতে যাচ্ছে কলকারখানা ও বেসরকারি অফিস। আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা পড়েছি ভোগান্তিতে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোঃ জাকির হাসান জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার জন্য গুরুত্ব দিচ্ছি। মহাসড়কগুলোতে একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। অবৈধভাবে যাত্রী বহনের জন্য গাড়ির চালক ও মালিকদের সতর্ক করা হচ্ছে, প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবুও মানতে চাচ্ছে না অনেকে।