সরকার যখন পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে পাটের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে ঠিক সেই সময়ে লালমনিরহাটে প্রশাসনের নাকের ডগায় কারখানা তৈরী হচ্ছে শতশত বস্তা পলিথিন। অথচ দেখার কেউ নাই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লালমনিরহাটের জেলা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে লালমনিরহাট-মোগলহাট মহা সড়কের সাকোয়া বাজারেই এই পলিথিনের কারখানাটি অবস্থিত। বাজারের সাথেই একটি জ্বালানি তেল বিক্রেতার ঘরের সাথে লাগোয়া দালান ঘর। সেই দালান ঘর ভাড়া নিয়ে ঢেউটিন দিয়ে ঘিরে অবৈধ পলিথিন কারখানার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সাকোয়া বাজার একটি জনবহুল ও ব্যস্থতম এলাকা। মোগলহাট পাকা সড়কের পাশে ঘরের এই অবৈধ পলিথিন কারখানাটির মেশিনের শব্দ যাতে কেউ শুনে বুঝতে না পারে সেজন্য দালান ঘরের বাহিরে আবার টিনের বেড়া দেয়া হয়েছে। বাজারে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে দালান ঘরে টিনের বেড়া। সেখানে সবার প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কৌশলে উঁকি দিতেই দেখা যায় ভিতরে কয়েকজন শ্রমিক কাজে ব্যস্থ। অনেকক্ষণ টোকা দেওয়ার পর দড়জা খোলেন একজন। ভিতরে ঢুকতেই দেখা গেল পলিথিন তৈরির কাঁচামালের স্তূপ। সেই ঘরে একদিকে ঘুরছে মেশিনের চাকা, অন্যদিক দিয়ে বের হচ্ছে পলিথিন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কারখানার মালিকের নাম আঃ সালাম। তিনি লালমনিরহাট রেলওয়ে বাজারের একজন পুরাতন পলিথিন ব্যবসায়ী। এক সময় সরকার পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে একতরফা পলিথিনের ব্যবসা সে একাই করে লক্ষ লক্ষ টাকার মালিক হয়েছেন। আজ তিনি নিজেই একজন পলিথিন কারখানার মালিক।

এবিষয়ে কারখানার মালিক সালামের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, জি আমিই ওই পলিথিন কারখানার মালিক, কি জানতে চান বলেন। এখানে কিছু লোকের কর্মসংস্থানের জন্য এ পলিথিন কারখানা শুরু করেছি। যদিও অনুমতি এখনো পাইনি তবে আবেদন করেছি। খুব শিঘ্রই বৈধ কাগজপত্র পর্যায়ক্রমে করা হবে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট-মোগলহাট সড়কের সাকোয়া বাজার সংলগ্ন দীঘ দিনের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী জহরুল হকের ঘর ভাড়া নিয়ে আঃ সালাম অবৈধ নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা গড়ে তোলেন। সেখানে একপাশে জ্বালানি তেল আর অন্যপাশে ঝুকিতে চলছে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা। যে কোন সময় ঘটতে পারে বিপদজনক দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে ওই কারখানায় অবৈধ নিষিদ্ধ নানা রকম পলিথিন তৈরি করে লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে বাজারজাত করা হচ্ছে। বর্তমানে এই পলিথিন কারখানার পলিথিন দিয়েই লালমনিরহাট জেলার বাজারে সয়লাব।

এই কারখানাটি ব্যাপারে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তেমন একটা অভিযান দেখা যায় না। কিছু লোক দেখানো অভিযান চললেও তখন মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। লালমনিরহাটে পলিথিন ব্যবসা জেলার একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জিম্মি। বাজারজাতকরণেও রয়েছে তাদের ‘পরিবহন সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটটি পলিথিন উৎপাদনের ছাড়পত্র না নিয়েই অসাধু ব্যবসায়ীরা পলিথিন ব্যাগ তৈরি করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লালমনিরহাটে নেই পরিবেশ অধিদফতরের কোন অফিস। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লালমনিরহাটে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে মানুষের শারীরিক হরমোন বাধাগ্রস্থ ও স্বাস্থ্য বাড়ছে। এর ফলে দেখা দিতে পারে বন্ধ্যাত্ব, নষ্ট হতে পারে গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণ, বিকল হতে পারে লিভার ও কিডনি। পলিথিনের বহুবিধ ব্যবহারের কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে মরনব্যাধী ক্যান্সার। জেলার দায়িত্বে থাকা রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন লোক জানান, সরকার দলীয় কিছু নেতাকে হাত করিয়ে কারখানা মালিক সালাম তার এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। আমরা এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ করেও এই অবৈধ পলিথিনের কারখানা বন্ধের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমরা এলাকাবাসী দ্রুত এই অবৈধ পলিথিন কারখানাটি বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, লালমনিরহাটে পলিথিন কারখানা হবে এ বিষয়ে আমরা কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাইনি বা আমাদের কাছে কেউ আবোদন করেনননি। সারা দেশে পলিথিন ব্যবহার সরকার নিষিদ্ধ করেছে। ওই কারখানার বৈধ কোন কাগজপত্র না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।