শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি. বলেছেন, আগামী একমাসের মধ্যে যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশী বয়সের অর্থাৎ যাদেরকে টিকা দেয়া যাবে তাদেরকে টিকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। টিকা দেয়ার পর ইমিউনিটি একটা পর্যায়ে আসতে সপ্তাহ দুয়েক সময়ের প্রয়োজন হয়। এরপর আমরা আশা করছি আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝির পরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে খুলে দিতে পারবো। এ ছাড়াও খুব বড় ঝুঁকি না নিয়ে স্কুলগুলোও খোলার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি স্কুল খোলার ব্যাপারে বলেন, স্কুলগুলো খোলার জন্য বিজ্ঞান সম্মত ভাবে বলা হয় যে সংক্রমণ শতকরা ৫ ভাগ এর নীচে নামলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা যায়। কিন্তু আমদের এখানে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই তাদের বাড়িতে ও স্বল্প পরিসরে অনেকের সঙ্গে বসবাস করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিকের সঙ্গে মানসিক ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি আছে, নানা রকম সমস্যাও আছে। তাছাড়া বর্তমানে সংক্রমণ রয়েছে ১৩/১৪ ভাগ। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আবার আমরা সামনের সপ্তাহে বসবো এবং ঠিক কত ভাগে নামলে আমরা খুব বড় ঝুঁকি না নিয়ে প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো। এটা বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সেইপর্যায়ে নেমে আসার জন্য আমরা অপেক্ষা করবো।

শুক্রবার বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) গাজীপুর ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গমাতার জীবনাদর্শ, অনুপ্রেরণা ও আত্মত্যাগ’ শীর্ষক ভিডিও আলোচনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি. সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বাউবি’র যৌথ উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যদের জীবনভিত্তিক ৫টি ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে এ অনুষ্ঠাণ অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবারের এ অনুষ্ঠানে কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অংশ নেন।

শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, আমরা আলাপ আলোচনা করছি, অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছি। গতকালই (বৃহষ্পতিবার) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত আমাদের জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আমাদের সকল বিশেষজ্ঞ, সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েশন এবং শিক্ষক ফেডারেশনকে নিয়ে বৃহষ্পতিবার একটি যৌথ সভা হয়েছে। সেখানে আমরা কি করে আগামী একমাসের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের যারা ১৮ বছরের বেশি যাদেরকে টিকা দেয়া যাবে তাদের টিকা দেয়ার কাজ শেষ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

মোবাইলে শিক্ষার্থীদের গেইমস খেলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, প্রযুক্তির যেমন ভালোর দিক আছে, সেইসঙ্গে প্রযুক্তির মন্দও কিছু থাকে। সেটা শুধুমাত্র এই সময়ের জন্যই নয়। বর্তমানে মোবাইল জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা একটা বড় সময় বাড়িতে কাটাচ্ছে। এখানে বাবা-মায়ের তদারকিটা খুব জরুরী। শিক্ষকরাও বিষয়টি দেখবেন। কাজেই মোবাইলের মাধ্যমে কিংবা অন্য ডিভাইসের মাধ্যমে পড়াশুনা এটাও এখন বস্তবতা। এটাকেও মেনে নিতে হবে। আমরা শ্রেণী কক্ষেও ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও কিন্তু এই অনলাইন পদ্ধতিও সেখানে থাকবে। কাজেই এটি এমন নয় যে শ্রেণী কক্ষে গেলেও আমাদের আর কোন ডিভাইসের ব্যবহার কখনও থাকবে না তা কিন্তু নয়।

তিনি আরো বলেন, এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময় আসছে। সেখানে আমাদের ডিজিটাল লার্নিং- সেটা তো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্ধ অংশ হয়েই যাবে। সেখানে আমরা কি করে শিক্ষার্থীদেরকে এই ডিজিটাল ডিভাইসের যে নেতিবাচক দিক আছে, তা থেকে কিভাবে তাদেরকে মুক্ত রাখবো – সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেমন দায়িত্ব আছে, অভিভাবকদেরও একটা বিরাট দায়িত্ব আছে। সেই দায়িত্ব কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকুক আর না থাকুক সে দায়িত্ব তো অভিভাবকদের পালন করতেই হবে।

অনুষ্ঠাণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. নাসিম বানু, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, ট্রেজারার অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল ও রেজিস্ট্রার ড. মহাঃ শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক আরিফা রহমান রুমা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

এরআগে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ও কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বাউবি ক্যাম্পাসের শেখ রাসেল চত্বরে ঔষধি বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট মোঃ জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠাণস্থলে শিক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানান।