করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় চালুর খবরে মাদারীপুর জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। তবে বন্যার কারণে পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পাঁচ উপজেলায় অন্তত ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে আগামীতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে। জেলায় পাঁচ উপজেলায় ৭২২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে, মাঠে ও যাতায়াতের রাস্তায় পানি উঠেছে। মাদারীপুর সদর উপজেলায় ২০৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫টি, শিবচর উপজেলায় ১৮০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টি, রাজৈর উপজেলায় ১৩৯টির মধ্যে ৬টি এবং কালকিনি ও ডাসার উপজেলায় ১৯৯টির মধ্যে ৩টি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা শিবচর উপজেলায়। পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদী তীরবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিটা বেশি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য নিয়ে কয়েকটি বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে রাজৈর উপজেলায় রাঘদী নাগরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হরিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিজলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর উপজেলার ইটখোলা বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরঘুনসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাফরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ পূর্ব মহিষেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহেরচর কাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালকিনি উপজেলার চরফতে বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাসচর বাচামারা আজদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৪০টি বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয়ের কোনটিতে শ্রেণিকক্ষে, কোনোটায় বিদ্যালয় মাঠে এবং কোনটায় যাতায়াতের রাস্তাায় পানি উঠে গেছে। এতে দীর্ঘ দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেন্বর থেকে বিদ্যালয় চালু হলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিবে। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এব্যাপারে রাঘদী নাগরদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সম্রাট হোসেন মোল্লা বলেন, ‘চারপাশ দিয়ে বন্যার পানিতে বিদ্যালয়টি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠে পাট-খড়ি ও ধানের খড়ের পালা দিয়ে রাখছেন এলাকাবাসি। কিছু বললে আমাদের উপর চড়াও হয়। যাতায়াতের রাস্তায় ও পানি। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার বলেন, ‘স্কুলের চারপাশ দিয়ে পানি। আমরা কীভাবে স্কুলে যাবো। শুনছি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলবে। যদি স্কুলে পানি থাকে, তাহলে ক্লাস করতে পারবো না। এতে আমাদের পাঠদান নিয়ে শঙ্কিত।

এব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাশিদা খাতুন জানান, ‘আমরা অনেকগুলো বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এরমধ্যে ৫টি বিদ্যালয়ের যাতায়াতের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে আপাতত পাঠদানে কোনো সমস্যা হবে না। করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গঠনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে আরো কঠিন পরিস্থিতি হলে স্কুল চালানো সমস্যা হবে।

শিবচর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ উপজেলায় চর ও নিম্মামাঞ্চল বেশি। যে কারণে ২৬টি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। আরো কিছু বিদ্যালয় ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে আরো অন্তত ২০টি বিদ্যালয় পানিতে প্লাবিত হবে। আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারাও কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে সন্নাসীরচর ইউনিয়নের খাসচর বাচামারা আজাদ বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে রয়েছে।

এব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, জেলার যেসব বিদ্যালয় পানি উঠতে পারে, তার একটি তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। কিছু বিদ্যালয়ের চলাচলের রাস্তায় পানি উঠেছে তবে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে সেভাবে পানি উঠেনি। যদি পানি উঠে, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরমধ্যে শিবচর উপজেলার চরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো বেশি ঝুঁকিপূণ।

সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।