চা চাষের জন্য পাহাড়ি ঢালু জমি প্রয়োজন। এমন বিশ্বাসকে বদলে দিয়ে সমতল ভূমিতে চা-চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সাংবাদিক নেতা অধ্যক্ষ ধনঞ্জয় কুমার রায় বিপুল। তার সফলতা দেখে এখন এক সময়ের পতিত গোচারণ ভূমি সবুজ চায়ের পাতায় ভরে গেছে। চা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয়রা। তৈরী হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান।

শখের এই চা বাগান গড়ে তুলে নিজে যেমনটা স্বাবলম্বী হয়েছেন পাশাপাশি শতাধিক মানুষের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। যার বেশির ভাগই সুবিধা পাচ্ছেন ওই এলাকার দিনমজুর ও দুস্থ নারীরা। চা বাগানটি ওই এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও ওই চা বাগানটি দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় এখানে অনেক জমি গোচারণ ভূমি হিসাবে ব্যবহার হতো। কিছু জমিতে আমন ধান চাষ হলেও বাকিসব অনাবাদি হয়ে সারাবছর পড়ে থাকত। সময়ের পরিক্রমায় সেই অনাবাদি জমি গুলো এখন প্রান্তিক চাষিদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ তৈরী করেছে।
ফলে একবার চায়ের বাগান করা হলে সেই বাগান থেকে প্রায় ৮০-১০০ বছর পর্যন্ত চা পাতা বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। ফলে অন্য চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে চা চাষে ঝুকে পড়ার জন্য অনেকেরই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
সমতল আর যে ভুমিতে ধানের চাষাবাদ হয় সেই জমিতেই চায়ের ভালো চাষ হচ্ছে। অসম্ভব এই কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন চা বাগানের মালিক অধ্যক্ষ ধনঞ্জয় কুমার রায় বিপুল।
তিনি স্থানীয় আর্শিয়া টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এর পাশাপাশি তিনি বঙ্গনিউজে সাংবাদিকতার পেশায় জড়িত। এছাড়াও তিনি লালমনিরহাট রিপোর্টার্স ইউনিটি উপদেষ্টা।

ওই উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের দইখাওয়া বাজারে গেলেই চোখে পড়ে উত্তর পাশের ওই চা বাগানটি। অতি সহজভাবেই সমতল জমিতে চা চাষ করে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ধনঞ্জয় কুমার রায় বিপুল। দুই বিঘা জমির ওপর বাগানটির নাম রেখেছেন বৈকুন্ঠ চা বাগান।

অধ্যক্ষ ধনঞ্জয় কুমার রায় বিপুল বলেন, ২০০৬ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজের এক শিক্ষাসফরে চা বাগান দেখতে পঞ্চগড়ে যাই। সেখানে চা চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। পরে হাতীবান্ধা চা বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০১০ সালে দুই বিঘা জমিতে চা চাষ শুরু করি। প্রতিমাসে ৬-৭ বার চা পাতা সংগ্রহ করা যায়। চা পাতা প্রতিকেজি ৩২-৩৩ টাকা করে বিক্রি হয়। বাগান থেকে বছরে প্রায় এক লাখ টাকা আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, চা পাতা সংগ্রহ করে হাতীবান্ধা থেকে পঞ্চগড় নিয়ে যেতে খরচ বাবদ প্রায় চার হাজার টাকা লাগে ৷ স্থানীয় ভাবে একটি শিল্পকারখানা হলে এই খরচ হবে না। আরও লাভবান হবো। তাই আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো স্থানীয় ভাবে শিল্পকারখানা তৈরির জন্য। চা চাষ একটি সহজলভ্য চাষ, এটি অন্যান্য কৃষি চাষাবাদের চেয়ে সাশ্রয়ী এবং লাভজনক। এখন সমতলেও চা চাষ করা সম্ভব, তাই কৃষকরা এখন চা চাষ করে সহজেই লাভবান হতে পারে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, আশপাশের চায়ের অকশন বাজার না থাকায় অনেক সময় তারা চা পাতার ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কম মুল্য পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলায় চা পাতা বিক্রি করতে হয়। চট্রগ্রাম ও মৌলভীবাজারের পাশাপাশি তিনি রংপুর অঞ্চলে চা পাতা অকশন বাজার করার দাবী জানিয়েছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক বলেন, উপজেলার ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, দইখাওয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সমতল জমিতে চা চাষ বেড়েছে। পাশাপাশি চা চাষ একটি সহজলভ্য এবং লাভজনক হাওয়ায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, দিনে দিনে মাটির পিএইচ কমে যাচ্ছে। ফলে অ্যাসিডিক সৃষ্টি হচ্ছে, যা চা চাষের উপযোগী। তাই উপজেলার যেকোনো জায়গায় চা চাষ করা সম্ভব। তবে মাটির পিএইচ কমে যাওয়ায় অন্যান্য ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।