গাজীপুরের দু’টি পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণার প্রতিবাদে এবং বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে রবিবার বিক্ষোভ করেছে ওই দুই কারখানার শ্রমিকরা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ অবরোধ করেছে। রবিবার গাজীপুর মহানগরীর বাসনসড়ক ও ভোগড়া চৌধুরীবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ছুঁড়েছে। পুলিশ টিয়ার সেল ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া চৌধুরীবাড়ি এলাকাস্থিত ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং বাসন সড়ক এলাকাস্থিত ইন্টারলিংক ড্রেসেস লিমিটেড কারখানা দু’টির শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো শনিবার রাত পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরে যায়। পৃথক মালিকানাধীন এ দু’কারখানায় যথাক্রমে প্রায় ৮শ’ ও ১২শ’ শ্রমিক রয়েছে। ইন্টারলিংক অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের গত সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ভাতা রবিবার এবং ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকদের বেতনভাতা ১২ অক্টোবর পরিশোধের কথা ছিল। শ্রমিকরা শনিবার রাতে কাজ শেষে কারখানা ত্যাগ করার পর কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে গোপনে ১০ অক্টোবর হতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানা দু’টি লে-অফ ঘোষণা করে গেইটে নোটিশ টানিয়ে দেয়। নোটিশে লে-অফ কালীন সময়ে যে সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকুরীর মেয়াদ ১ বছরের অধিক হয়েছে তাদেরকে শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পরদিন সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে ওই নোটিশ দেখতে পেলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয় কারখানার শ্রমিকরা লে-অফ ঘোষণার প্রতিবাদে তাদের কারখানার গেইটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া এবং বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কারখানার পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপর পৃথক অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে।

জিএমপি’র বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা পাশর্^বর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চৌধুরীবাড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। প্রায় একই সময়ে ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকরা বাসনসড়ক এলাকায় একই মহাসড়কের উপর অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে। এতে মহাসড়কের উভয়দিকে কয়েকশ’ যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কারখানার মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আশ^াস দিয়ে অবরোধকারীদের সড়কের উপর থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। একপর্যায়ে দুপুর পৌণে একটার দিকে শিল্প পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ছুঁড়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিলে ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এদিকে আলোচনার আশ^াস পেয়ে প্রায় একই সময়ে ইন্টারলিংক ড্রেসেস কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিকেলে পুলিশের মধ্যস্থতায় ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস কারখানার শ্রমিকরা তাদের দাবী দাওয়া নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।

ইন্টারলিংক অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রশিদ এ ব্যাপারে জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে এ কারখানার ব্যবসায়িক অবস্থা ক্রমাগত মন্দা হওয়ায় কর্তৃপক্ষ চরমভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। এমতাবস্থায় কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ শ্রমআইন মোতাবেক ১০ অক্টোবর হতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কারখানাটির সকল সেকশনের কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। লে-অফ কালীন সময়ে যে সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তার চাকুরীর মেয়াদ ১ বছরের অধিক হয়েছে তাদেরকে শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।