গাজীপুরে গলাকেটে মা-মেয়ের জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত ফেরদৌসির জামাতা (ভাতিজির প্রাক্তন স্বামী)সহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। ইনস্যুরেন্সের কিস্তির টাকা চাওয়ায় এবং স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ইন্দনদাতা সন্দেহে প্রতিশোধ নিতে ক্ষুব্ধ ওই জামাতা তার বন্ধুর সহযোগিতায় এ জোড়া খুন করে। পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দুইটি চাকু ও মোটর সাইকেল এবং নিহতের ব্যাগ উদ্ধার করেছে। শনিবার জিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। এসময় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজোয়ান আহমেদ, সহকারি পুলিশ কমিশনার (সদর জোন) রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৈয়দ রাফিউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের সালদিয়া গ্রামের সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান (২১) এবং একই গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে ও নিহত ফেরদৌসির জামাতা মোঃ মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫)।

জিএমপি’র ওই কর্মকর্তা জানান, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর প্রায় দুই বছর আগে গাজীপুর সদর উপজেলার খুদে বরমী এলাকার রবিউল ইসলামকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন দুই সন্তানের জননী ফেরদৌসী আক্তার (২৮)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বড়াইয়া গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিন বছুর মেয়ে। প্রথম সংসারের দু’সন্তান হাফসা আক্তার (১০) ও তাসমিয়া আক্তার (৪)কে নিয়ে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন ফেরদৌসি। তিনি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে মাঠ কর্মী হিসেবে চাকুরি করতেন। তিনি একই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি পাইয়ে দেন ভাতিজী লিমাকে। চাকুরি পাওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী মহিউদ্দিন ওরফে বাবুকে ডিভোর্স দেয়। লিমাকে চাকুরি পাইয়ে দেয়াটাই কাল হলো ফেরদৌসির। বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনায় ইন্দনদাতা হিসেবে ফুপু শাশুড়ি ফেরদৌসিকে দায়ী করেন বাবু। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বাবু বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ধর্ণা দিয়ে ব্যার্থ হয়। এদিকে ইনস্যুরেন্সের পাওনা কিস্তির টাকা চাওয়ায় ফেরদৌসির উপর ক্ষুব্ধ হয় বাবু। উভয় ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বাবু তার বন্ধু জাহিদুলকে নিয়ে ফেরদৌসিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ নবেম্বর সন্ধ্যায় বোনকে দিয়ে বীমা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ফেরদৌসীকে বাসা থেকে ডেকে আনে জাহিদুল। মেয়ে তাসমিয়াকে নিয়ে ফেরদৌসি একই রিক্সায় চড়ে জাহিদুলের সঙ্গে মহানগরীর দেশীপাড়ার বিমান বাহিনীর টেক এলাকায় যায়। সেখানে নির্জন এলাকায় পৌছা মাত্রই ফেরদৌসীর গলায় ছুরিকাঘাত করে জাহিদুল। এসময় ধ্বস্তাধস্তিতে জাহিদুলের হাত কেটে যায়। ঘটনাস্থলে পূর্ব থেকে অপেক্ষমাণ বাবু চাকু দিয়ে আহত ফেরদৌসির গলার অপর অংশ কেটে ফেলে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ফেরদৌসি। এঘটনা দেখে তাসমিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও মুখ চেপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে জাহিদুল। পরে তারা নিহত ফেরদৌসির মোবাইল ও হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পথে তারা ব্যাগটি একটি ঝোপের মধ্যে এবং মোবাইল ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু দু’টি সালদিয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। পুলিশ মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে জাহিদুলকে ও পরে বাবুকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের হ্যান্ড ব্যাগ এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দু’টি চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইজ্জত আলী বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়।

তিনি আরো জানান, ঘটনার দু’দিন আগে তারা মোটরসাইকেলে ঘুরে হত্যাকান্ডের জন্য মহানগরীর সদর থানাধীন দেশীপাড়া এলাকার বিমান বাহিনীর নির্জন টেক বেছে নেয়। পরে হত্যাকান্ডে ব্যবহারের জন্য সুইচ গিয়ার দুইটি সাড়ে তিনশ’ টাকা দিয়ে রাজধানীর বায়তুল মোকারম এলাকার ফুটপাতের দোকান থেকে কিনে আনে জাহিদুল।