ঢাবি’র অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত নির্মাণ শ্রমিক আনারুল ইসলামকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ (মঙ্গলবার) আদালতে হাজির করা হচ্ছে। আদালতে তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে সে পুলিশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে।

জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফফার (৭১) নিখোঁজের ৩দিন পর গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) তার লাশ গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের একটি ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার নির্মানাধীন বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক আনারুল ইসলামকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহষ্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের লাশ পরদিন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। গাজীপুরের অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারই পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে গ্রেফতারকৃত আনারুল। মঙ্গলবার তার রিমান্ডের শেষ দিন। এদিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য তাকে আদালতে হাজির করা হবে। আদালতে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তাকে পুনঃরায় রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হতে পারে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার মোশারফ হোসেন মৃধার বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া বাসায় থাকতেন অধ্যাপক সাইদা গাফফার। ভাড়া বাসায় থেকে তিনি একই এলাকাস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভেতরে নিজ প্লটে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ পরিদর্শণ শেষে ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন ঢাবি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। কিছুদুর যাওয়ার পর অধ্যাপক সাইদার পার্টস থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে পেছন থেকে তার নাক-মুখ চেপে ধরে তারই বাড়ির রাজমিস্ত্রির হেলপার আনারুল ইসলাম। উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে আনারুলের ডান হাতে সজোরে কামড় দেন ৭১ বছর বয়সী অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। এতে আনারুলের হাত জখম হয়। এসময় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ^াসরোধে সাইদা গাফ্ফারকে হত্যা করে নিহতের হাত থেকে ১০ হাজার টাকাসহ দুইটি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় আনারুল। পরে নিহতের লাশ পাশর্^বর্তী ঝোপের ভিতর লুকিয়ে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় আনারুল। এ আবাসন প্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই বলে জানান তারা।

এদিকে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের খোঁজ না পেয়ে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। মায়ের সন্ধান না পেয়ে তাঁর মেয়ে সাহিদা আফরিন বুধবার কাশিমপুর থানায় একটি সাধারণ ডাইরী করেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে খোঁজ-খবর নেয়। তদন্তকালে আনারুলকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিস্ত্রীর যোগালী আনারুলকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহষ্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাতে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিখোঁজের তিনদিন পর ১৪ জানুয়ারি চার সন্তানের জননী অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের ওই আবাসিক প্রকল্পের নিজ প্লটের দু’শগজ দুরের একটি ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতের কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের একমাত্র ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারকে হত্যার পর ওই রাতেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার শ্বশুরবাড়িতে যায় আনারুল। সেখানে রাত্রি যাপন করে পরদিন বুধবার সকালে একই জেলার সাদুল্লাহপুর থানার বুর্জুগ জামালপুর গ্রামের তিনি নিজ বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপন করে সে। শুক্রবার পুলিশ তার খোঁজে ওই গ্রামে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টাকালে আনারুলকে গ্রেফতার করা হয়।

নিহতের ছেলে ব্যাংকার সাউদ ইফখার বিন জহির জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মৃত কিবরিয়া উল খালেকের স্ত্রী। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। দুই মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। একমাত্র ছেলেসহ বাকী দুই সন্তান বাংলাদেশে থাকেন। অধ্যাপক কিবরিয়া উল খালেক ১৯৯৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।