বাগেরহাটের কচুয়ায় ২‘শ বছরের পুরোনো দক্ষিন রাড়িপাড়া জামে মসজিদের পাশে নতুন করে আরও একটি মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। এলাকাবাসী ও মসুল্লীদের তুমুল বিরোধীতা স্বত্তেও প্রভাবশালী ওই গ্রুপটি মসজিদের নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে রাড়িপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা নতুন মসজিদ নির্মান বন্ধ রাখার অনুরোধ করলেও কোন কাজে আসছে না। উপরন্তু মসজিদ নির্মানে কেউ বাঁধা দিলে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়েছে প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিরা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, দক্ষিন রাড়িপাড়া গ্রামের আছাদ মোল্লা, রাসেল মোল্লা, জাহাঙ্গীর ফকির ও আনছার শেখসহ কয়েক জন দুইশ বছরের পুরোনো মসজিদের পাশেই নতুন আরেকটি মসজিদ নির্মানের চেষ্টা করছেন। পুরাতন মসজিদ থেকে যার দূরত্ব দুইশ গজও হবে না। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও এই মসজিদের কোন প্রয়োজন নেই। স্থানীয় জন প্রতিনিধি, ইমাম ও মুফতিগণও এই মসজিদ নির্মান করতে নিশেধ করেছেন তাদের। তারপরও তারা এই মসজিদ নির্মান করে যাচ্ছেন। এদিকে নতুন এই মসজিদ নির্মান হলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এমনকি হত্যাকান্ডের মত অপরাধ ঘটতে পারে বলে দাবি করেছেন দক্ষিন রাড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দারা।

স্থানীয় মোঃ হাসান, ডাকুয়া সাইফুর রহমান, রফিক ব্যাপারী, জাহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন বলেন, দাদার দাদাও এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। আমরাও পড়ছি, আমাদের ছোট এই এলাকায় আর মসজিদের প্রয়োজন হয় না। এই একটা মসজিদই মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয় না, আবার একটা মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করেছে। এটা খুবই অন্যায়। এর ফলে এলাকায় শান্তির বিপরীতে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। দুইশ বছরের পুরোনো এই মসজদটি এলাকার মানুষের অন্যরকম আবেগ রয়েছে। এলাকার মানুষের আবেগ অনুভূতি ও ইচ্ছাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আছাদ মোল্লারা এই মসজিদ নির্মান করলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে বলে দাবি করেন তারা।
মসজিদের সাবেক সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোল্লা মুজিবুর রহমান বলেন, আমার চাচাতো ভাই আছাদ মোল্লা ও তার লোকজন নুতন মসজিদ নির্মানের চেষ্টা করছেন। আমি অনেকভাবে তাকে এই কাজ করতে নিশেধ করেছি। শুধু আমি না মুফতিরাও বলেছেন এখানে মসজিদ নির্মান করা ঠিক হবে না, কে শোনে কার কথা।

মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ডাকুয়া রেজাউল বলেন, আছাদ মোল্লা ও রাসেল মোল্লারা খুবই অসামাজিক লোক। বিভিন্ন সময় তারা নানা অপরাধ করেছেন। এখন এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষে সকলের নিশেধাজ্ঞা স্বত্তেও তারা এই মসজিদ নির্মান করছেন। মসজিদের সভাপতি ৭৫ বছর বয়সী মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমার দাদার বাবাও এই মসজিদে নামাজ পড়েছেন। এলাকার সবাই মিলে যুগ যুগ ধরে আমরা এই মসজিদের নামাজ পড়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়াই আছাদ মোল্লা ও রাসেল মোল্লা মসজিদের পাশে আরেকটা মসজিদ নির্মানের চেষ্টা করছেন। এটা কোনভাবে এলাকার লোকজন মেনে নিবে না। দুই চার জনে কি একটা মসজিদে নামাজ পড়া যায়। শুধু টাকা হলেই যা ইচ্ছে তাই করা যায় না। এখানে মসজিদ নির্মান করলে এলাকার মুসল্লীরা এর কঠোর প্রতিবাদ করবে বলে হুশিয়ারী দেন তিনি।

মসজিদের ইমাম হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটা মসজিদের পাশে কেন আরেকটা মসজিদ নির্মান করতে হবে এটা আমার বুঝে আসে না। এই ধরণের কাজ ইসলামও সমর্থণ করে না। যারা এটা করছেন তারা গোমরাহীর মধ্যে পরে যাবে। এদিকে মুসল্লীদের অভিযোগ অস্বীকার করে আছাদ মোল্লা বলেন, আমরা নতুন মসজিদ তৈরি করতে চাইনি। বরং পুরোনো মসজিদ একটু ভিতরে সেখান থেকে এনে রাস্তার পাশে নতুন জায়গায় নতুন ভাবে মসজিদটি নির্মান করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু স্বার্থানেশ্বী মহল নতুন মসজিদ নির্মানে বাঁধা সৃষ্টি করছেন। কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, একটি বিষয় শুনেছি। যদি কেউ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি কর তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।

বাগেরহাট প্রতিনিধি