নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়াকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ৬ শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা গেছে। অনুসন্ধান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাদের সনাক্ত করে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘সনাক্ত হওয়া সবাই ঢাকা কলেজের। ঘটনার সময় কয়েকজন হেলমেট পরা ছিল। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ সংঘর্ষের ওই মামলা তদন্তের দায়িত্বে থাকা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) রোববার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। তবে সেখান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

যে ৬ জন প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তবে এই ৬ জনের নাম বা বিস্তারিত পরিচয় জানাননি ডিসি ফারুক হোসেন। অবশ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও বিশ্লেষণ করে কয়েকজনের নাম ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। তারা সবাই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই এখন। ২০১৬ সালে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলও তারা আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। কলেজের ছাত্রলীগ এখন কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, শনাক্ত হয়েছে এমন কোনো ছাত্রের বিষয়ে তথ্য জানতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো সদস্য তার কাছে আসেননি, জানতেও চাননি।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কেউ কোনো শিক্ষার্থীর বিষয়ে জানতে চাইলে সহায়তা করা হবে।’

কোনো শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে- এমন তথ্যও নেই জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘রোববার ছাত্রাবাসে গোয়েন্দা পুলিশ আলামত উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। তারা একজনকে নিয়েছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে তবে তার মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে।’

গত ১৮ এপ্রিল ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে নিউ মার্কেটের দুই দোকানের কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউমার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।

পরদিন দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। তাদের মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের একটি কম্পিউটার এক্সেসরিজের দোকানের ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। আর ইটের আঘাতে আহত হন মোরসালিন নামে এক দোকানকর্মী। পরে হাসপাতালে মারা যান তারা দুজন।

দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে ২টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা ২টি মামলা করেছে পুলিশ। এরমধ্যে হত্যা মামলা ২টির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), বাকি ২ মামলায় থানা পুলিশ তদন্ত করছে।