নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আর কত কাদবেন ? আমি নিজেকে শক্ত করে আশি। কিন্তু, কখন চোখ ভিজে যায় বুঝতে পারি না। চোখের পানিকে বারুদে পরিনত করতে হবে।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আগে গুম হওয়া সকলকে ফেরত এবং গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ২.৩০টায় পূর্ব শেওড়াপাড়া, মাতবরের পুকুরপাড়, কাফরুল, ঢাকা থেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মহসিন (৪৪) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গুম করেছে তার সন্ধানের দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এই প্রধানমন্ত্রী কি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী ? তিনি হচ্ছেন র্যাব-পুলিশের প্রধানমন্ত্রী। আপনারা তাকে ভোট দেননি। আপনাদের ভোটের প্রয়োজনও তার হয় নাই। ঈদের আগে আপনারা আপনাদের স্বজনকে ফেরত চাচ্ছেন। দুই দিন পর ঈদ, তিনি কি আপনাদের কথা শুনবেন ? আপনারা তার কাছে জবাব চান। আর জবাব না দিলে ঈদের পর একসাথে সরকারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুন।

তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এ সরকার থাকলে কোনদিনও আপনাদের স্বজনরা ফিরে আসবে না। গুম হওয়া স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে হলে রাজপথে আসতে হবে। আপনাদের সাথে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজ সহ সবাই থাকবে।

মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতির চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, অধিকারের সভাপতি প্রফেসর ড. সি আর আবরার, মানবাধিকার নেতা নূর খান লিটন, রেজাউর রহমান লেলিন, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলেন, নিখোঁজ মহসিনের পিতা কয়ছর আহাম্মদ গাজী, স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন, ছোট ভাই মো. বাবলু গাজী, গুম হওয়া ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী নাসরিন আক্তার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দ।

গুম হওয়া মো. মহসীনের স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি তেজগাঁয় পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন।

ফরিদা ইয়াসমিন তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কাফরুল থানায় ২৫ এপ্রিল সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

ফরিদা আরো বলেন, শেওড়াপাড়ায় মাদবরের পুকুরপাড়ের একটি বাসায় তাঁরা থাকেন। ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৭–৮ জন তাঁদের বাসায় আসেন। এ সময় বাসার বাইরে কয়েকটি হায়েস গাড়ি দাঁড়ানো ছিল। বাহিনীর সদস্যরা জানান, তাঁর স্বামীর নামে ভোলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তবে তাঁরা পরোয়ানা দেখাননি। তাঁদের একজনের একটি পরিচয়পত্রের ছবি তোলেন বাসার এক সদস্য। তাঁরা তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ওই ছবিও মুছে ফেলেন।

পাঁচ দিন পর অভিযোগ করার কারণ জানতে চাইলে ফরিদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে তিন দিন চুপ করে থাকতে বলেছিলেন।