চট্টগ্রাম সাগরিকা স্টেডিয়াম থেকে
ইতিহাসের পাতা ঘটালে দেখা যায় চট্টগ্রামের সাগরিকার উইকেট মানেই রানের বন্যা। যেকোন দলই উইকেট দেখে টস জিতে গেলে আগে ভাগে ব্যাট করতে নেমে পড়ে। গতকাল দুপুরে অতিথি শ্রীলঙ্কার কোচ ও অধিনায়ক সাগরিকার উইকেটের কাভার তুলে মাথা ঢুকিয়ে দেখলেন। কি দেখলেন তা আজ সকালে টস জিতে ব্যাট হাতে তুলে নেবার পর পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রথম টেষ্টের ১ম দিন শেষে স্কোর ২৫৮/৪।

এই উইকেটে টস জেতা মানেই আগে ব্যাট করে বড় স্কোরের নিচে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরা। তাতে দিনের অর্ধেকটা সময় লঙ্কানরা সফল ছিল। কিন্তু দিনের শেষ ভাগটা ছিল স্বাগতিক বাংলাদেশের স্পিনাদের দখলে। বিশেষ করে করোনা থেকে মুক্ত হওয়া সাকিব শেষ বিকেলে উইকেট শিকার করে দলকে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণের সুযোগ তৈরি করে দিলেন। কিন্তু বিকেল অবদি অভিজ্ঞ ম্যাথিউস আর চান্দিমালের ৭৫ রানের জুটি উল্টো প্রতিরোধ গড়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ যদি সকাল সকাল এই জুটিকে ফেরেত পাঠানো সম্ভব না হয় তাহলে বড় স্কোরের নিচে চাপা পড়তে চলেছে বাংলাদেশ।

লঙ্কা আজ কতটা পথ পাড়ি দেয় সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। লঙ্কা যদি ৪ শত রানের কোটা পেরিয়ে যায় তাহলে অবশ্যই লঙ্কার হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। আর যদি অতিথি দলের স্কোর ৪ শত রানের নিচে আটকানো যায়, তাহলে টাইগাদের জন্য একটা সুযোগ খোলা থাকবে। তবে যদি দুই দলই সমান তালে ২০১৮ সালের মতো বড় ইনিংস খেলে ফেলে তাহলে ম্যাচ ড্র হত বাধ্য।

২০১৮ সালে এই সাগিরকার উইকেটেই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেষ্ট ড্র হয়েছিল। সে টেষ্টে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ সংগ্রহ করেছিল ৫১৩ রানে অলআউট। জবাবে ১ম ইনিংসে লঙ্কানরা জম করে ৭১৩/৯ রান! তাতে মেন্ডিসের নামের পাশে ঝলমল করছিল ১৯৬ রানের ইনিংস। এবার কত রানে গিয়ে থামবে লঙ্কানরা? এ প্রশ্নটা ততোক্ষনই ছিল যতক্ষণ মেন্ডিস উইকেটে ছিলেন। মেন্ডিসকে ৫৪ রানে তাইজুল ফিরিয়ে টেনশন মুক্ত করছেন। কিন্তু ম্যাথিউসকে আটকানো যায়নি, টপ অর্ডারের এই লঙ্কান ১২তম টেষ্ট সেঞ্চুরিটা ঠিকই আদায় করে নেন। দিন শেষে ম্যাথিউস ১১৪ রানে আরদিনেশ চান্দিমাল ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন।

টস হারলেও বাংলাদেশ দলের স্পিনার নাইম হাসান সকালেই সফলতা এনে দিলেন। দুই পেস তারকা খালেদ আর শরিফুল পুরো দিন জুড়েই সফলতার পেছনে দৌড়ালেন। যদিও তাদের দৌড় ব্যর্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ সাগরিকার উইকেটে মুলত বোলারদের জন্য কিছুই থাকে না।

অভিজ্ঞ সাকিব আর নির্ভতার প্রতীক তাইজুলও ব্যর্থ হলেন চা বিরতি পর্যন্ত। ৮ম টেষ্ট খেলতে নামা নাইম একা একা চেষ্টায় সফলতা খুঁজলেন। স্পিনার নাইম নিজের প্রথম ওভারেই সফল হলেন। এলবি’র ফাঁদে ফেলে অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœকে (৯) সাঁজ ঘরের পথ দেখালেন নাইম হাসান। ৮ম টেষ্ট খেলতে নামা নাইম হাসান এই টেষ্টে উইকেট শিকারের উদ্বোধন করলেন। ওসাদা ফার্নন্দো ২১ আর কুশাল মেন্ডিস ২ রানে ব্যাট করছিলন।

ওসাদা ফার্নন্দো নতুন সঙ্গী মেন্ডিসকে নিয়ে এগিয়ে যাবার পথে সেই নাইম ৩৬ রানে থাকা ফার্নন্দো ফেরালেন উইকেটের পেছনে থাকা লিটনের হাতে ক্যাচ বানিয়ে। লঙ্কানরা লাঞ্চে যায় ৭৩ রানে ২ উইকেট।

এরপর তো শুধু দেখে যাওয়া, কারণ অভিজ্ঞ মেন্ডিস আর এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসেরর ৩য় জুটি দলকে চা বিরতি অবদি টেনে নিলেন। স্কোর তখন ১৫৮/২। মনে হচ্ছিল লঙ্কার এই দুই টপ অর্ডার বহু দূরের পথ পাড়ি দিবেন। দুই ব্যাটসম্যানেরই রানের সংখ্যা ৫৪! ৪৯তম টেষ্টে কুশাল মেন্ডিস ১৩ম ফিফটির দেখা পেলেন আর ম্যাথিউ ৩৮ম ফিফটির।

এই জুটি যেভাবে দেখে শুনে খেলছেন, তাতে ২০১৮ সালের স্মৃতি নতুন করে ২০২২ সালে রচীত হলে অবাক হবার কিছু ছিল না। কিন্তু বাধা দিলেন ত্জাুল ইসলাম। নাইমের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন তাইজুল ৫৪ রানে থাকা মেন্ডিসকে। তবে দুই বার ম্যাথিউসের উইকেট পকেটে জমা করতে ব্যর্থ হলেন তাইজুল।

কারণ ৩৮ রানে এলবি’র আবেদন নাকোচ এরপর ৭৩ রানে থাকা ম্যাথিউসের স্লিপে তোলা ক্যাচ হাতে নিতে ব্যর্থ হলেন মাহমুদুল হাসান জয়। তা নয় তো এতোটা পথ আসতেই পারতেন না ম্যাথিউস। তারপরও চাপ দিতে চেষ্টা চালায় বাংলাদেশের স্পিনাররা। এবার সফলতার মুখ দেখলেন সাকিব।

দিনভর কোন উইকেট শিকার করতে না পারা সাকিব বিকেলের দিকে ম্যাথিউসে সঙ্গী ৬ রানে থাকা ধানানজয় ডি সিলভাকে স্লিপে সেই জয়ের হাতেই ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। ১৮৩/৪ স্কোরের ফলে ম্যাচ কিছুটা টাইগাদের নিজেদের মুঠোয় আসে। সেটা আবারো প্রশ্নের মুখে পড়ে ৫ম জুটিতে ম্যাথ্সি আর দিনেশ চান্দিমালের জুটি প্রতিরোধ গড়ে তুললে। সে প্রতিরোধ শেষ বিকেল অবদি ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব হয়নি সাকিব, তাইজুল আর নাইমের পক্ষে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম টেষ্ট-২০২২
প্রথম দিন শেষে
টস শ্রীলঙ্কা (ব্যাটিং)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ২৫৮/৪, বোলিং : নাইম হাসান ১৬-২-৭১-২, তাইজুল ইসলাম ৩১-৮-৭৩-১, সাকিব আল হাসান ১৯-৭-২৭-১, খালেদ আহমেদ ১১-১-৪৫-০ ও শরিফুল ইসলাম ১৩-১-৩৮-০।